চিতই পিঠা | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি বগুড়া: প্রকৃতিতে এখন শীতের আগমনী বার্তা। ভোর আর সন্ধ্যায় হালকা হিম ভাব জানান দিচ্ছে প্রকৃতির দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। শীত মানেই পিঠা-পুলির স্বাদ। শীত আর পিঠার যেন অন্য রকম মিতালি। বগুড়া শহরে হালকা শীতেই জমে উঠেছে হরেক পিঠার বিকিকিনি। ভোর আর সন্ধ্যায় শহরের জনাকীর্ণ স্থানে, রাস্তার মোড়ে কিংবা মহল্লার অলিগলিতে শীতের হরেক পিঠার পসরা সাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। সেসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

পিঠার মৌসুমি এই ব্যবসা অনেক দরিদ্র মানুষের উপার্জনের পথ খুলে দিয়েছে। পিঠা বিক্রির আয়ে চলছে অনেকের সংসার। নাগরিক জীবনের নানা ব্যস্ততায় যারা ঘরে পিঠা বানিয়ে খাওয়ার সময় পান না, তাঁরা এসব দোকান থেকে পিঠা কিনে নেন।

বগুড়ার সাতমাথা, ইয়াকুবিয়া মোড়, মফিজ পাগলার মোড়, কোট হাউস স্ট্রিট, জলেশ্বরীতলা শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, জেলখানা-সংলগ্ন লাবাম্বা মোড়, বকশিবাজার মোড় এবং পাড়া-মহল্লার মোড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানে শীতের হরেক গরম-গরম পিঠা তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে। পিঠা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীতের সময় মৌসুমি এসব পিঠার অন্য রকম কদর ক্রেতাদের কাছে। তবে এবার পুরোদমে শীতের আগেই জমে উঠেছে পিঠার বেচাকেনা।

সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় শহীদ আবদুল জব্বার সড়কে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে সাজিয়ে বসা পিঠার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেল। এখানে কিশোর বয়সে ছেলে হেলাল উদ্দিনকে (১৭) নিয়ে শীতের হরেক স্বাদের পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত মা হেলেনা বেগম (৩৫)। হেলেনা বেগম বলেন, বগুড়া শহরের মালগ্রাম এলাকায় বসবাস করেন তিনি। স্বামী মহরম আলী পেশায় রিকশাচালক। চার বছর ধরে শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। আগে একা একা ভ্যানে করে পিঠার দোকান সাজিয়ে বসতেন। করোনায় ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন ছেলেকে নিয়ে পিঠার ব্যবসা করেন।

হেলেনা বেগম বললেন, এখানে চিতই, ভাপা, পুলি ও তেলের পিঠার কদর সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি পিঠা এখানে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা, সিলিন্ডারের গ্যাসসহ প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার টাকার পুঁজি লাগে ব্যবসায়। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার টাকা লাভ হয়। এ দিয়ে সংসার চলে। পিঠার ক্রেতা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শীত যত ঘনিয়ে আসবে, পিঠার চাহিদা ও বেচা-বিক্রি তত বাড়বে।

এই দোকানে পিঠা খেতে আসা কলেজশিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, হালকা শীতের এই সন্ধ্যায় চিতই পিঠার সঙ্গে শর্ষের ভর্তা, মরিচের ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তার স্বাদে জিবে জল আসে। এ স্বাদের কারণেই প্রতিদিন এখানে পিঠা খেতে আসেন তিনি।

জহুরুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘১৫ টাকায় এখানে সুস্বাদু পিঠা মিলছে। কোনো কোনো দিন খাওয়ার পর পরিবারের লোকজনদের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যাই।’

শহরের জেলখানা-সংলগ্ন লাবাম্বা মোড়ে ভ্যানে পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন নুরজাহান বেগম ও তাঁর স্বামী ফরিদ উদ্দিন। নুরজাহান বেগম বলেন, পিঠা বিক্রির আয়ে সংসার চলছে। শীত যত বাড়বে পিঠা বিক্রির তত ধুম পড়বে।