অনির্বাচিত সরকার বসাতে চায় একটি মহল: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। ঢাকা, ২২ অক্টোবর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একটি মহল বাংলাদেশে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। আর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের ইচ্ছেমতো বাংলাদেশ পরিচালিত করা যাবে। এ জন্যই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে।

রোববার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এক বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। জাতীয় সংসদের সরকারি দলের জন্য বরাদ্দ কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসতে পারে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি ভোটে না এলে মনোনয়ন–বাণিজ্য করবে কীভাবে? তারা মনোনয়ন–বাণিজ্য করার জন্য ভোটে আসতে পারে। পরে নির্বাচন বিতর্কিত করতে নানা অজুহাতে ভোট বর্জন করতে পারে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বিপুল উন্নয়ন করেছে। অন্যদিকে বিএনপিতে নেতৃত্ব নেই। তাদের কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতিও নেই। ফলে তাদের জেতার কোনো সুযোগ নেই।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও সুষ্ঠু ভোট হবে। এ ক্ষেত্রে বেশি বেশি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।

‘বর্তমান সদস্যদের সবাই মনোনয়ন পাবেন না’
দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জরিপের ভিত্তিতে যোগ্যদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারবেন না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব তিনি নিতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, এখানে যাঁরা আছেন, সবাই মনোনয়ন না–ও পেতে পারেন। মনোনয়ন পান না পান, নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। যাঁরা নৌকার বিরোধিতা করবেন, তাঁদের রাজনীতি চিরতরে শেষ বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে রাজবাড়ীর সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পরও এলাকায় তিনি সভা–সমাবেশ করতে পারেন না। জেলা আওয়ামী লীগের অনুমতি ছাড়া তিনি কিছু করতে পারবেন না বলে জানানো হয়েছে।

কেরামত আলী বলেন, তাঁর ভাই কাজী ইরাদত আলী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই তিনি নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। সংসদ সদস্য হয়েও কি এলাকায় যেতে পারবেন না, এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরেক সংসদ সদস্য জিল্লুল হাকিম।

বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি অন্য সংসদ সদস্যদের বক্তব্য শোনেন। জানা গেছে, এ সময় নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রামের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, সৈয়দা রুবিনা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বৈঠক শেষে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারে, সে কারণে নির্বাচন বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকারকে চায় দেশি-বিদেশি অনেকেই। কারণ, অনির্বাচিত সরকার হলে তাদের প্রভাব বিস্তার করতে সুবিধা হয়।