শোকসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। শুক্রবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির আলটিমেটাম ফাঁকা বুলি ছাড়া অন্য কোনো কিছু নয়। গত ১৩-১৪ বছরে বিএনপি বহুবার আলটিমেটাম দিয়েছে।
চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে বিএনপি সরকারকে পদত্যাগের যে আলটিমেটাম দিয়েছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সদ্যপ্রয়াত সাংবাদিক আজাদ তালুকদার স্মরণে এক দোয়া মাহফিল ও শোকসভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গত ডিসেম্বরেও বিএনপির আলটিমেটাম ছিল, তারপর খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ পাঠানোর আলটিমেটামও ছিল। এখন ১৮ তারিখ আবার আলটিমেটাম দিয়েছে। এই আলটিমেটাম কি এ বছরের ১৮ তারিখ, নাকি আগামী বছরের ১৮ তারিখ, নাকি তারও পরের বছরের ১৮ তারিখ, সেটিও অনেকে প্রশ্ন রেখেছে।'
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে সেখানে যে সংখ্যক মানুষ হয়েছে, চট্টগ্রামের লালদিঘির পাড়ে অনেক সময় যখন পাগল নাচে, তখনো এর কাছাকাছি মানুষ হয়। সুতরাং কর্মসূচিতে লোকসমাগম সেভাবে না হওয়ায় তারা প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।'
যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালালে দেশের মানুষ প্রতিহত করবে। একইভাবে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া কখনো বিদেশিরাও সমর্থন করে না।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি আশা করেছিল, বিদেশিরা তাদের কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে, সেই আশাও বুমেরাং হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং জি-২০ সম্মেলনে জো বাইডেনসহ অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বৈঠক হয়েছে, এতেও বিএনপি হতাশ হয়ে পড়েছে।’
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব বলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবেন না, এতেই প্রমাণিত হয়, তারা নির্বাচনকে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, তাদের কর্মসূচি ও সমাবেশগুলোতে মানুষ হচ্ছে না। ফলে তারা বুঝতে পেরেছেন, নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনা নেই। এ জন্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার পথে তারা হাঁটছে। কিন্তু সেটি এই দেশের মানুষ হতে দেবে না।’
একুশে পত্রিকার উদ্যোগে এই শোকসভার আয়োজন করা হয়। পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নজরুল কবির দীপুর সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য ওবায়দুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন মো. সেকান্দর চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র শাহজাহান সিকদার, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মহসিন কাজী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুবেল খান, সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ, ক্রীড়া সম্পাদক সোহেল সরওয়ার প্রমুখ।
শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজাদ তালুকদার যেমন অকুতোভয় সাংবাদিক ছিলেন, একই সঙ্গে একজন লড়াকু মানুষ ছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি জানতেন, ধীরে ধীরে তাঁর জীবনপ্রদীপ নিভে যাচ্ছে। তিনি কিন্তু ক্ষান্ত হননি, দমে যাননি, অবিরত লড়াই করেছেন।’
একজন মেধাবী সাংবাদিক অল্প বয়সে চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের অনেক বিষয় অনেকের চোখ এড়ালেও আজাদ তালুকদারের চোখ এড়ায়নি। অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধেও সঠিক রিপোর্টটি করেছেন, যেটি কেউ সাহস করে করেননি। অসংখ্য পত্রিকার ভিড়ে একটা পত্রিকা দাঁড় করানো খুব সহজ কাজ নয়। আবার সেটির পাঠকপ্রিয়তা পাওয়া আরও কঠিন কাজ; কিন্তু তিনি নিজে একা লড়াই করে কোনো বড় গ্রুপের কাছে বিক্রি না হয়ে একুশে পত্রিকা দাঁড় করিয়েছেন। আমরা তাঁর আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করি।’