নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থল রণক্ষেত্রে পরিণত হয় | ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো রাজনৈতিক দল যাতে রাস্তায় সহিংসতা ছড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অনুরোধ করেছেন দেশের ২৩৭ বিশিষ্ট নাগরিক। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান তাঁরা। বিশিষ্টজনদের আহ্বান, কোনো দল যেন জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিক।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি রাজপথে ভয়াবহ এক সহিংসতাকে দেখেছি। দুটি ধর্মের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসবকালে এমন সহিংসতা হবে বলে এর আগেই আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ বিষয়ে কর্ণপাত না করে বিএনপি ও জামায়াত সমাবেশ করে। সহিংসতার এক দিন আগে, বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান সরকার পতনের লক্ষ্য অর্জনে রাজপথে দলীয় ক্যাডারদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।’
বর্তমানে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানকে উদারপন্থী ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের জন্য জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশ করার ধ্বংসাত্মক রাজনীতির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামীর এক শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের এক হাইপ্রোফাইল কর্মকর্তার মধ্যে একটি বৈঠকের বিষয়ে গণমাধ্যম প্রতিবেদন উঠে আসার পর আমরা আতঙ্কিত হয়েছি। ১৬ অক্টোবর ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর গণমাধ্যমের চোখে আমরা দেখেছি, কীভাবে তারেক রহমানের নির্দেশে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে জামায়াতও সহিংস ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়েছে।’
বিবৃতিদাতারা বলেন, এই সহিংসতার আগে জামায়াতের সঙ্গে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা এ ধরনের বৈঠক এবং তারপর দলটির নেতাদের রাস্তায় নামার হুমকি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করেন যে সহিংসতা সংগঠিত করার জন্য বিএনপি–জামায়াতের পদক্ষেপের পেছনে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সরাসরি সমর্থন রয়েছে কি না! জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী ও সাম্প্রদায়িক একটি সংগঠন যে তার রাজনৈতিক নিবন্ধন হারিয়েছে এবং সমাবেশ করার জন্য পুলিশের অনুমতি অস্বীকার করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণার পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বিএনপির একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রশংসা করা হয়। মূলত সাংবাদিকদের ওপর এই ভিসা নিষেধ আরোপের ঘোষণাটি পিটার ডি হাস প্রদান করেন আর তারপরই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ উগ্র গোষ্ঠীগুলো মার্কিন এই রাষ্ট্রদূতকে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ বলে অভিহিত করে। অন্যদিকে মার্কিন অর্থায়নে এরই মধ্যে বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত একটি পোর্টাল নেত্র নিউজ বিএনপি-জামায়াতের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার মানবাধিকারকর্মীদের অপমান করার জন্য বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আরও খারাপ বিষয় হলো, এর এক সম্পাদক তাসনীম খলিল স্বনির্বাসিত নাগরিক। তিনি বলেছিলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার পর বাংলাদেশে গুমের সংস্কৃতি শুরু হয়েছিল।’ আর এই পোর্টালের অপর সম্পাদক বিরোধীদলীয় নেতা ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান।
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘এই পোর্টালকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং মৃতের সংখ্যাকে কমিয়ে উপস্থাপনের মাধ্যমে জামায়াতকে সাহায্য করতে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। এরই সঙ্গে যুক্ত করে বলা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং স্থানীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা গত বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে কোনো শ্রদ্ধা নিবেদন করেননি। এই সব পদক্ষেপের আলোকে আমরা মনে করি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন যে তাঁরা রিচার্ড নিক্সন–সমর্থিত বৈদেশিক নীতির প্রবল সমর্থক কি না, যে নীতি ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।’
বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘আগামীকাল (মঙ্গলবার) বিএনপি–জামায়াত নেতাদের অবরোধ আরোপের আহ্বানকে কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে এই ধরনের ধর্মঘট সাধারণ মানুষের জন্য বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। যানবাহনে আগুন বোমা হামলার স্মৃতি, ঘুমের মধ্যে মানুষ হত্যা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের দ্বারা হামলার স্মৃতি এখনো ভোলেনি তাঁরা।’
তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে বিবৃতিদাতারা বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই এই দলগুলোর নেতৃত্বের নিছক উদাসীনতা প্রকাশ করে। বিশ্বের এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে আবারও বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে এমন সহিংসতার জন্য হাজার হাজার ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয় বাংলাদেশের।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন শাহরিয়ার কবির, রামেন্দু মজুমদার, মুনতাসীর মামুন, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সালমা হক, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, রানা দাশগুপ্ত, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার, ডা. আমজাদ হোসেন, নুরুন নবী, আবুল বারক আলভী, মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ডা. ইকবাল কবীর, সুব্রত চক্রবত্তী, মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, আবদুল গাফ্ফার হোসেন, কাজী লুৎফর রহমান, কামরুননেসা মান্নান, আজাহার উল্লাহ ভূঁইয়া, নির্মল রোজারিও, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় প্রমুখ।