গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি বগুড়া: অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে দুদকের বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ১ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার ৫২৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী বগুড়া আদালতের পিপি আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, গোলাম মাহফুজ চৌধুরী জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করে ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৭-এর ১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া সম্পদের তথ্য গোপন করে দুদক আইনের ২৬-এর ২ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে গোলাম মাহফুজ চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুলের নামে দুদকের করা আরেকটি মামলা তদন্তাধীন আছে। গত বছরের ২৫ এপ্রিল এ দুটি মামলা করেন দুদক বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর আলম।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, গোলাম মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোলাম মাহফুজ চৌধুরীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই গোলাম মাহফুজ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩১ টাকা। একই সঙ্গে তাঁর দেনা দেখানো হয় ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু দুদক কর্মকর্তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে সম্পদের অনেক গরমিল ধরা পড়ে।
দুদক জানায়, গোলাম মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহারের নামে জয়পুরহাটে একটি পাঁচতলা ভবন আছে। এই ভবনের আর্থিক মূল্য তাঁরা গোপন করেছেন। জেলা গণপূর্ত দপ্তর থেকে ওই ভবনের মূল্যায়ন করে তার আর্থিক হিসাব বের করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করায় স্বামী-স্ত্রীর নামে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। এর মধ্যে গোলাম মাহফুজের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্তকালে ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ১ কোটি ২ লাখ ৮ হাজার ৫২৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ জুলাই বগুড়ার কাহালু উপজেলায় সবজিবাহী ট্রাকে ১০টি বিদেশি অস্ত্র ও মাদকের চালান আটকের পর আলোচনায় আসেন গোলাম মাহফুজ চৌধুরী। ট্রাকটির মালিক ছিলেন তিনি। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নওগাঁর বদলগাছি থেকে ঢাকাগামী ওই সবজিবাহী ট্রাকটি থামিয়েছিলেন। তাঁরা তল্লাশি করে একটি স্কুলব্যাগ ও জুতার বাক্স পান। পরে স্কুলব্যাগ থেকে ১৩৬ বোতল ফেনসিডিল ও স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো জুতার বাক্স থেকে ১০টি ওয়ান শুটারগান (আগ্নেয়াস্ত্র) জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন অস্ত্র বহনকারী জয়পুরহাট সদরের ভাদসা পালী গ্রামের ছোটন, ট্রাকচালক আক্কেলপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের কাবিল হোসেন ও চালকের সহকারী নওগাঁর বদলগাছি আধাইপুর কার্তিকাহার গ্রামের সেভেন হোসেন ও জনি।