রেল জংশন স্টেশন থেকে ঢাকার পথে নতুন ট্রেন চালুর দাবিতে মানববন্ধন। বুধবার ঈশ্বরদী ষ্টেশন রোড বাজার এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ঢাকাগামী দুটি ট্রেনের রুট পরিবর্তনের প্রতিবাদে ও চলমান ট্রেনগুলোতে আসন বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে।  

বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরের বাজার সড়কে ‘ঈশ্বরদীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ এবং স্টেশন প্ল্যাটফর্মে ‘আমরা ঈশ্বরদীবাসী’ ব্যানারে পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

দুটি কর্মসূচি থেকেই ঢাকাগামী দুটি ট্রেনের রুট পরিবর্তনের প্রতিবাদ জানানো হয়। এ ছাড়া ঈশ্বরদী থেকে নতুন ট্রেন চালু ও চলমান ট্রেনগুলোতে আসন বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়। দ্রুত দাবি বাস্তবায়িত না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন।

বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসে বাজার সড়কে সমবেত হন। এরপর তাঁরা ‘ঈশ্বরদীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে দীর্ঘ মানববন্ধন তৈরি করেন। এই মানববন্ধন শেষ হলে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে অপর মানববন্ধনটি শুরু হয়। সেখানে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

দুটি কর্মসূচিতে বক্তারা জানান, ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বাস। এ ছাড়া পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলার বাসিন্দারা ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনে ভ্রমণ করেন। এখানে যাত্রীদের চাপ রয়েছে। বহু যাত্রী ট্রেনের টিকিট পান না। তাঁরা কষ্ট করে ট্রেনে চলাচল করেন। এমন অবস্থার মধ্যেই রেল বিভাগ ঢাকা-ঈশ্বরদী-খুলনা পথে চলা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ঢাকা-বেনাপোল পথে চলা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করেছে। ট্রেন দুটি এই রুট থেকে সরিয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে। এতে ঈশ্বরদী স্টেশনের যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

অন্যদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী আটটি ট্রেন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে না এসে বাইপাস এলাকা দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনগুলোতে এই অঞ্চলের মানুষ কোনো সুবিধা পান না। বাকি কিছু ট্রেন জংশন স্টেশন দিয়ে চলাচল করলেও তাতে ঈশ্বরদীর জন্য আসনসংখ্যা খুব কম। ফলে ঈশ্বরদীবাসী বাইপাস দিয়ে চলা ট্রেনগুলো জংশন স্টেশন দিয়ে চালানোর দাবি করেন। একই সঙ্গে অন্য ট্রেনগুলোতে আসন বৃদ্ধি ও নতুন ট্রেন সংযোজনের দাবি জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, ‘ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন ব্রিটিশদের তৈরি করা শত বছরের স্টেশন। এটি চালুর পর থেকেই সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ঈশ্বরদী দিয়ে ঢাকায় চলাচল করেছে। নিয়মিত চলা ট্রেন দুটি সরিয়ে নিলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়বেন। তাই ট্রেন দুটি এই রুটে রাখার দাবি জানাই। দাবি না মানা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

ঈশ্বরদীর সচেতন নাগরিক, ক্রীড়া সংগঠক ও এলাকাবাসী মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য ওহিদুজ্জামান টিপুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, সহসভাপতি খোন্দকার মাহাবুবুল হক দুদু, পৌর কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক, পৌরসভার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান অঞ্জন, সোনালি অতীত ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোহন,  স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঈশ্বরদী শাখার আহবায়ক মাসুদ রানা ও  সামাজিক ও মাদকবিরোধী সংগঠন মানাবের সভাপতি মাসুম পারভেজ কল্লোল প্রমুখ। 

বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মানববন্ধন চলাকালে মোস্তাক আহমেদ কিরণ তাঁর বক্তব্যে বলেন, জনস্বার্থে সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেসের রুট বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায়। ঈশ্বরদী জংশনে যাত্রীর তুলনায় আসনসংখ্যা অত্যন্ত কম। বৃদ্ধ ও নারী যাত্রীদের কথা চিন্তা করে অনতিবিলম্বে আসনসংখ্যা বাড়াতে হবে।

অন্যদিকে জংশন স্টেশনের অপর মানববন্ধনটিতে ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আসাদুর রহমান বীরুর সভাপতিত্বে ও  দৈনিক উত্তর জনতার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ববি সরদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক মোল্লা, পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল হামিদ, সাঁড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ, লেখক ও কলামিস্ট মোশাররফ হোসেন মুসা, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তৌহিদ আক্তার পান্না, যুবলীগ নেতা  ইমতিয়াজ চৌধুরী মিলন ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মফিকুল ইসলাম মুকুল। 

এ বিষয়ে কথা হলে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত রেলভবন নিয়েছে। আপাতত ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে শুধু চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন রয়েছে ঢাকা যাওয়ার জন্য। নতুন ট্রেন চালুর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবে রেলভবন। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’

দুটি ট্রেনের রুট পরিবর্তনের প্রতিবাদ ও অন্য ট্রেনে আসন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন প্ল্যাটফর্মে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন