পানিতে ভেসে গেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে গত বুধবার থেকে টানা বর্ষণে ফসলের খেত ও মাছের পুকুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিতে অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকের ফসলি জমিতে এখনো পানি জমে আছে। এতে আমন ধান ও সবজিতে পচন ধরেছে। ভারী বৃষ্টিতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো জানাতে পারেনি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর।
তবে এই বৃষ্টিকে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলছেন দুই অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে খুব বেশি বৃষ্টি হয় না। এতে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছিল। এ ধরনের বৃষ্টি পানির স্তরকে মজবুত করবে। আর একজন মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহীতে পানির অভাবে পুকুরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছিল। নতুন পানি আসায় মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে।
রাজশাহীতে গত বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত টানা চলে। ৪৮ ঘণ্টার হিসাবে বৃষ্টির পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটারের বেশি। তবে আবহাওয়া অফিস ২৪ ঘণ্টা করে বৃষ্টির হিসাব করে থাকে। এতে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪৪ মিলিমিটার এবং আর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৮৮ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহীতে টানা এত সময় ধরে বৃষ্টি বিগত ১০ বছরেও হয়নি বলে আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ রাজিব খান শুক্রবার সকালে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বৃষ্টি থেমেছে। আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। তবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়ার কৃষক মো. রায়হান আলী জানান, তীব্র বর্ষণে তাঁর তিন বিঘা জমির ফুলকপি তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে তাতে পচন শুরু হয়েছে। রায়হান আলী আজ শুক্রবার সকালে বলেন, তাঁর দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। দেড় বিঘা জমির ফুলকপি কেবল কেটে বিক্রি করা শুরু করেছেন। ওই জমির দিকে আর তাকানো যায় না। অন্য দেড় বিঘার ফুলকপি আর এক মাস পর কাটা যাবে। ওই জমির পাতায়ও পচন ধরেছে। রোদ না উঠে আবার বৃষ্টি হলে যতটুকু আছে তা–ও পচে যাবে।
রায়হান আলী বলেন, ভারী বর্ষণ হলেও পানি আগে দ্রুত নেমে গিয়ে ফলিয়ার বিলে চলে যেত। ওই বিলজুড়ে অবৈধ পুকুর হওয়ার কারণে পানিপ্রবাহ নেই। এ কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁও গ্রামের মাছচাষি মৃদুল ইসলামের ৩০ বিঘা জমির পুকুরের ওপর দিয়ে পানির স্রোত বয়ে গেছে। আজ শুক্রবার সকালেও পুকুরের পাড়ের ওপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। মৃদুল বলেন, এ রকম বৃষ্টি হবে ভাবতেও পারেননি তিনি। পুকুরে প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ ছিল। সব ভেসে গেছে। পানির স্রোতের কারণে নেটও দেওয়া যায়নি। পানি শুকালে বোঝা যাবে আদৌ পুকুরে মাছ অবশিষ্ট আছে কি না।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রসাদপাড়া গ্রামের ফারুক হোসেনের মাছের পুকুরের ওপর দিয়ে পানির স্রোত গেছে। আশপাশের মানুষ রাস্তায় জাল ফেলে বড় বড় মাছ ধরছেন। তাঁর আশঙ্কা, পুকুরের সব মাছ ভেসে চলে গেছে। তিনি বলছেন, তার পুকুরটি ছিল উঁচুতে। কখনোই ওই এলাকায় পানি ওঠে না। ১৯৮৬ সালের দিকে একবার পানি হয়েছিল।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে আমন ধানও তলিয়ে গেছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হাড়িয়াপাড়া এলাকার কৃষক আশেক আলী বলেন, তাঁর জমিতে এখনো পানি জমে আছে। ধানগাছে মুকুল হয়েছে। পানি জমে থাকলে সেগুলো পচে যাবে। পানি বের হওয়ার গতিও কম।
রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজশাহীতে এত টানা বৃষ্টি কখনো হয়নি। এতে বিলের মধ্যে থাকা পুকুর এবং শহরাঞ্চলে থাকা পুকুরগুলো ডুবে মাছচাষিদের ক্ষতি হয়েছে। তবে উঁচু জায়গার পুকুরে তেমন ক্ষতি হয়নি। বরং কিছু এলাকায় মাছচাষিদের জন্য এই বর্ষণ ভালো হয়েছে। রাজশাহীতে পানির অভাবে পুকুরে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছিল। নতুন পানি এসে মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্যগুলো মাঠ থেকে আসা শুরু হয়েছে। তাঁদের কর্মকর্তারাও মাঠপর্যায়ে গেছেন। আগামী রোববার সার্বিক তথ্য পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, অনেকেই শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। সেগুলোর ক্ষতি হয়েছে। তবে বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে গেলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।