সালিসের মাধ্যমে কিশোরীর বিয়ে দিয়ে ধর্ষণের মীমাংসা

সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগী কিশোরীর বিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে নান্দাইলের একটি গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নান্দাইল: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় সালিসের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার এক মাদ্রাসাছাত্রীকে (১৪) অভিযুক্ত ব্যক্তির (৩৫) সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মীমাংসা করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতবরদের নেতৃত্বে সালিসে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নান্দাইল উপজেলার একটি গ্রামে এ সালিসের আয়োজন করা হয়। সালিসে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া। এতে অভিযুক্ত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সালিসে ইউপি চেয়ারম্যানের দুই পাশে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা বসে আছেন। সালিস আয়োজনের কারণ ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেখি সমস্যাটি সমাধান করা যায় কি না।’ কী সমস্যা, প্রশ্ন করলে ইউপি চেয়ারম্যান এ প্রতিবেদকসহ অন্য সাংবাদিকদের সালিস থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

সালিস থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে সমস্যার ব্যাপারে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের চারজন বাসিন্দা বলেন, সম্প্রতি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্থানীয় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। একাধিক মাদ্রাসায় তাঁর যাতায়াত আছে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী কিশোরী একই এলাকার একটি মহিলা কওমি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

গ্রামের রাস্তায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর সালিসের সিদ্ধান্তের খবর পাওয়া যায়। সালিসে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগী মাদ্রাসাছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তে গ্রামবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির কঠোর বিচার হওয়া প্রয়োজন ছিল। নির্যাতনের শিকার কিশোরী গরিব পরিবারের সদস্য বলেই বিচার পায়নি।

অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্তের পর বক্তব্য জানতে চাইলে কিশোরীর মা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। কিশোরীর বাবা কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সালিসস্থলে বিয়ে পড়াতে গিয়েছিলেন মো. ওবায়দুল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। ১৮ বছর না হওয়া মেয়ের বিয়ে নিবন্ধনের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ওবায়দুল্লাহ এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি বিয়ে পড়াননি দাবি করে বলেন, শুধু দোয়া পড়িয়েছেন। বিয়ে সম্পন্নের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে গা ঢাকা দেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আজকের সালিসে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা উভয় পক্ষ মেনে নিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা সালিসে মীমাংসা করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ ছাড়া মুঠোফোনে কিছু বলা সম্ভব নয়।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুন কৃষ্ণ পাল বলেন, ধর্ষণের বিচার সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী হতে হবে। কোনো সালিসে এ ধরনের অভিযোগের বিচার করা যায় না। মেয়ের পরিবারকে তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলতে পারবেন।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, তিনি ঘটনাটি জানেন না। ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ না দিলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না। অভিযোগ দিলে পুলিশ অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেবে।