পাবনায় মেয়রের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ আটকে দেওয়ার অভিযোগ, বেড়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পাবনার বেড়া উপজেলার এএইচই তরঙ্গ প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসিফ শামসের বিরুদ্ধে একটি বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করে টিনের বেড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুর্গাপূজার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুযোগে তিনি টিন দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথটি আটকে দিয়েছেন। ছুটি শেষে রোববার সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল ও থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে।

মেয়র আসিফ শামস স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম এএইচই তরঙ্গ প্রি-ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল। বেড়া পৌরসভার থানাপাড়া মহল্লায় ২০০০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়ের সামনে একটি পরিত্যক্ত ফাঁকা মাঠ রয়েছে। এই মাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সে পথে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। দুর্গাপূজার ছুটির আগপর্যন্ত, অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পথটি খোলা ছিল। ছুটি শেষে রোববার সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখে, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথসহ পুরো মাঠ টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁরা জানতে পারেন, পৌরসভার মেয়র আসিফ শামস জমিটি নিজের দাবি করে ঘিরে দিয়েছেন।

বিষয়টি জানার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। তাঁরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বেড়া মডেল থানায় গিয়ে হাজির হয়। সেখানে থানা-ফটক আটকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে পুলিশ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে যায়।

টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁরা জানেন সামনের ফাঁকা জায়গাটি সরকারি পরিত্যক্ত জমি। দীর্ঘ ২৩ বছরে কেউ কোনো দিন জমিটির মালিকানা দাবি করেননি। হঠাৎ করে পৌরসভার মেয়র আসিফ শামস জমিটির মালিকানা দাবি করেন। তিনি জমিটি কিনেছেন বলে জানান।

শাহজাহান আরও বলেন, বিদ্যালয়ে প্রবেশে আর কোনো পথ নেই। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পারায় ক্লাস বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি তাঁরা থানা-পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন। কিন্তু পথটি খোলার কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আসিফ শামস জমিটি তাঁর স্ত্রীর কোম্পানির নামে কেনা হয়েছে বলে দাবি করেন। তবে কবে কিনেছেন তা মনে নেই বলে জানান। তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে তো রাস্তা হয় না। জমিটি স্কুলের হলে তাঁদের কাগজপত্র দেখাতে বলেন। তবে জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্কুলটির প্রতি আমারও দায়িত্ব আছে। পৌর এলাকায় কিছু হলে আমিই তো সমাধান করি। প্রয়োজনে আলোচনার ভিত্তিতে রাস্তার জায়গা দেওয়া হবে।’

অভিভাবকদের কয়েকজন বলেন, সামনে ডিসেম্বর মাস। বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এ সময়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্লাস বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থী চরম সমস্যায় পড়বে। তাই তাঁরা দ্রুত রাস্তাটি খুলে দেওয়ার দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক বলেন, জায়গাটি ব্যক্তিগত হলেও একজন মেয়র হিসেবে তিনি বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করতে পারেন না। মেয়র বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। ছুটির মধ্যে বন্ধ না করে স্কুল খোলা অবস্থায় বন্ধ করতে পারতেন। এভাবে গোপনে বন্ধ করা উচিত হয়নি।

বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাদিউল ইসলাম বলেন, তিনি প্রাথমিকভাবে জেনেছেন যে জমিটি মেয়র কিনেছেন। তিনি রাস্তার জমি দেওয়ার বিনিময়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুলের জমি থেকে সমপরিমাণ জমি চেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মত না হওয়ায় তিনি তাঁর জমি ঘিরে দিয়েছেন। এতে রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা থানায় এসে বিষয়টি জানিয়েছে। তাঁরা দ্রুত বিষয়টি নিয়ে মেয়র সাহেবের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষা পর্যন্ত রাস্তা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

ইউএনও মোরশেদুল ইসলাম বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রবেশপথ বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছে। জায়গাটি আসলে কার মালিকানায় তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে স্কুলের প্রবেশপথ খুলে দেওয়ার বিষয়ে তিনি মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করবেন।