সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল পর্যটনকেন্দ্র। শনিবার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রিয়াদ ইসলাম, সিলেট থেকে: পাহাড় আর হাওর-বিল, বনের কারণে সৃষ্ট বিচিত্র ভৌগোলিক অবস্থা সিলেটকে আলাদাভাবে পরিচিতি দিয়েছে। সেই সিলেটের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভূমিকম্প, যা নিয়ে বেশ শঙ্কিত এই অঞ্চলের মানুষ। সিলেটের পাশেই দুটি ভুমিকম্প স্পট ডাউকি ও আসাম ফল্ট। এর মধ্যে ডাউকি ফল্ট নিয়েই উদ্বেগ বেশি।

গত দুই মাসে বিভিন্ন মাত্রার একাধিক ভূমিকম্প জানান দিচ্ছে ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে সিলেট বিভাগের জন্য। দুই দশকের চিত্র বলছে– সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা হ্রাস, বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিকতায় বাতাসের গড় আদ্রতা বৃদ্ধি, বন উজার ও টিলা ধ্বংসের মতো বিষয়গুলো সিলেটের ভূপ্রকৃতি অনেকটাই বদলে দিয়েছে, যা এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা বাড়াচ্ছে।

ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, ভূ-স্তরে ইউরেশিয়ান প্লেটের অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে। এই প্লেটটির পাশেই ভারত-বার্মা প্লেট। সাম্প্রতিক সময়ে প্লেট দুটি অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠায় সিলেটে কয়েকদিন পর পরই লাগছে ভূমিকম্পের ঝাটকা। সিলেটের সাম্প্রতিক ভূকম্পনগুলো মৃদু মাত্রার হলেও এগুলো বড় বিপর্যয়ের পূর্বাভাস।

বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে সিলেটের ছাতক উপজেলার ১১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ১৪ ও ২৯ আগস্ট ৩ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ৫ মাত্রার দুটি ভূকম্পন অনুভূত হয় সিলেট অঞ্চলে। ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে ৪ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় এই অঞ্চলে। সর্বশেষ ২ অক্টোবর সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার কম্পনে কেঁপে ওঠে সিলেট।

শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল পরিবেশ ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত উত্তর-পূর্বের সিলেট বিভাগ। নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটা, বন নিধন, পাহাড়ি ঢলসহ নানা কারণে সিলেটের ভূপ্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা এবং আদ্রতা বাড়ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নির্মল পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন মৃদু ভূ-কম্পন বড় ধরনের ভূ-কম্পনের আবাস। রিকটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেই তছনছ হবে সিলেট। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারে। দ্রুত এখানকার পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় তৎপর না হলে সিলেটসহ তা গোটা দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে– সিলেটে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে গেছে। আগে একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে টানা বৃষ্টিপাত হলেও এখন সেরকম হয় না। এখন বৃষ্টি হয় বিচ্ছিন্নভাবে ভেঙে ভেঙে। এজন্য ওই রিপোর্টে সিলেটে নির্বিচারে ব্যাপক হারে পাহাড়-টিলা কাটা বনভূমি উজার ও নতুন বনায়ন না করাকে দায়ী করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক এমরান হোসেন জানান, স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও প্রচার চালানো হচ্ছে। সিলেটের প্রকৃতি বিশেষ করে পাহাড় ও টিলা সংরক্ষণে জোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।