ঢাক-কাঁসরের বাদ্যে ষষ্ঠী উদ্‌যাপিত

গুলশান-বনানী পূজা মণ্ডপে ভক্তরা। ২০ অক্টোবর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক ও কাঁসর বাজছে। ধর্মীয় সংগীতও চলছে। ফুল, ধূপ ও আগর সৌরভ ছড়াচ্ছে। একপাশে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বলছে। বাহারি আলোকসজ্জায় দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমা উজ্জ্বল।

শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী পুণ্যার্থী প্রতিমার সামনে আসছেন। খালি পায়ে করজোড় করে দেব-দেবীদের প্রণাম করছেন। প্রণামের সময় অনেকে দেব-দেবীর কাছে মনের বাঞ্ছা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ আবার দেবী মায়ের সঙ্গে ছবি তুলতেও ভুলছেন না।

রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোয় আজ শুক্রবার এমন চিত্রই দেখা যায়। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে আজ শুরু হয়েছে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আগামীকাল শনিবার মহা সপ্তমী। ভক্তরা উপবাস রেখে অঞ্জলি দেবেন এবং প্রসাদ গ্রহণ করবেন।

আজ সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর রমনার কালী মন্দিরেও সকালে ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই মণ্ডপের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ‘সকাল সাতটায় আমাদের মণ্ডপে ষষ্ঠী পূজা শুরু হয়। শেষ হয় সকাল সাড়ে আটটার দিকে।’

পূজার উপকরণ জোগাড় করতেও ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে আয়োজকদের। রমনা দুর্গাপূজার মণ্ডপের সামনে বসে পূজার জন্য খই থেকে ধানের খোসা বাছাই করছিলেন রুমা ঘোষ, পার্বতী ঘোষ ও শুক্লা সরকার। রুমা ঘোষ বলেন, ‘খই বাছাই করছি। এই খই দিয়ে পূজার উপকরণ তৈরি করা হবে।’

আজ পূজার আনুষ্ঠানিকতা তেমন না থাকলেও ঢাকার মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তদের ভিড় করতে দেখা গেছে। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার খামারবাড়িতে পূজামণ্ডপে দুপুরে প্রতিমা দর্শন করতে আসেন শ্রাবন্তী ধর ও শিবানী ধর নামের দুই বোন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাঁরা ঢাকায় শ্যামলীতে থাকেন। কাল চট্টগ্রামে চলে যাবেন। তাই আজ ঢাকায় ঘুরে ঘুরে পূজা দেখবেন।

দুপুরে শ্রাবন্তী ধর বলেন, ‘বছর শেষে মা এসেছেন, মাকে দেখতে বেরিয়েছি। এখন পর্যন্ত দুটি পূজা দেখেছি। আরও কয়েকটা দেখার ইচ্ছা আছে।’

সন্ধ্যায় ঢাক-কাঁসরের বাদ্য; সন্ধ্যাপ্রদীপ, ধূপ ও ফুলের সুবাস এবং সংগীত ও নৃত্যের অনুষ্ঠানে মুখর হয়ে ওঠে বনানীর দুর্গাপূজার মণ্ডপ। রাজারবাগ বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে সকালে দেবীর বিহিত পূজা হয়। সকাল থেকেই ছিল ভক্তদের আনাগোনা। বিকেলের দিকে এই সংখ্যা আরও বাড়ে। সন্ধ্যায় মণ্ডপগুলোয় বোধনের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করা হয়।

হিন্দুশাস্ত্রমতে, শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে দেবী বাপের বাড়ি বেড়াতে মর্ত্যলোকে এসেছেন। অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজোরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। আবির্ভূত হওয়ার পর দেবী দুর্গা আসুরিক শক্তিকে বিনাশ করে ত্রিভুবন রক্ষা করেন।

ষষ্ঠীতে ঘোটক বা ঘোড়ায় চড়ে দেবী আসেন। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী দুর্গা বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর দুর্গাপূজা হবে ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে।

ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।