কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন এক দম্পতি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: খুব বেশি দিন হয়নি। ওখানে বিন্না ঘাস, বুনো লতা-গাছের ঝোপই ছিল। খুব দরকার ছাড়া কেউ ওদিকটায় যেতেন না। কিন্তু দেখতে দেখতে কয়েক বছর ধরে শরৎ এলেই আকাশে যেমন সাদা মেঘের ভেলা ভাসে, এখানে পদ্মা নদীর পাড়ে ফোটে কাশফুল। থোকা ধরা সাদা ফুলের চাদরে ঢেকে যায় স্থানটি।
ক্লান্তশ্রান্ত জীবনের একফাঁকে অনেকেই ছুটে আসছেন এই স্থানে একটুখানি মায়া, একটুখানি মুগ্ধতার কাছে। মনের মধ্যে শুভ্রতার রেশ নিয়ে তাঁরা ঘরে ফিরছেন। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের চররূপপুর নলগাড়ি এলাকায় পদ্মা পাড় এখন কাশফুলের সাদায় উজ্জ্বল, নজরকাড়া, মনভোলানো মুগ্ধতা নিয়ে কাশফুলের স্পর্শে ঘুরছেন অনেকেই।
বিশাল মাঠজুড়ে ফুটে আছে কাশফুল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বৃহস্পতিবার বিকেলে কাশবনে গিয়ে দেখা গেল, ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধবসহ, কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউ কাশফুলকে জড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ছবি তুলছেন দল বেঁধে। একদল কিশোর-কিশোরী সেজেগুজে এসেছে। কাশফুলের সঙ্গে নানা ভঙ্গিতে ছবি তুলছিল তারা। পাশেই পদ্মা নদী থেকে উত্তোলন করা বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেই বালুর মধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছেন অনেকে। শিশুদের কেউ কেউ কাশফুল ছিঁড়ে হাতে নিয়ে ঘুরছে। পদ্মা নদীতে বইছে জলের প্রবাহ। সেদিকেও মুগ্ধ চোখে অনেকে তাকিয়ে ছিলেন। দীর্ঘ সাদা কাশবনে তখন বিকেলের আলোতে বিহ্বল করা রূপ খুলেছে কাশফুল।
কাশবনে খেলায় মেতেছে শিশুরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোলাইমান খান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কাশবনে ঘুরতে এসেছেন। পুরো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খুশি খুশি ভাব। সেই উচ্ছ্বাসের কথা তাঁদের কথাতেও ঝরে পড়ছিল। তিনি বলেন, ‘কাশবনের জায়গা থেকে আমার বাসা খুব দূরে না, নদীর অপর পাড়ে। কিন্তু জানতাম না এখানে এ রকম একটি কাশবন আছে। আজকেই প্রথম এসেছি। এসে তো বিস্মিত! এই প্রথম এত সুন্দর কাশবন দেখলাম। পরিবারের সবাইকে দেখাতে নিয়ে এসেছি।’
শহরের বাবুপাড়া এলাকা থেকে এসেছেন গৃহিণী সোমা । তিনি নানাভাবে কাশফুলের সঙ্গে অনেক ছবি তুললেন। তিনি বলেন, ‘এই কাশবনে কাশফুল দেখতে আসলেই অনেক সুন্দর। খুবই মনোমুগ্ধকর।’
নবম শ্রেণিপড়ুয়া আবু জাফর শেখের চোখে তখনো কাশফুল দেখার বিস্ময়, মুগ্ধতা লেগে আছে। সে বলে, ‘একসঙ্গে আর কোথাও এত কাশফুল দেখছি না।’
কাশফুল নিয়ে ছবি তুলছেন এই তরুনী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চররূপপুর নলগাড়ি এলাকার এই পদ্মা পাড়টি আগে অনেকটাই খালি ছিল। বিন্না ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের ঘাস হতো। কিছু বুনো গাছগাছড়া, লতাপাতার ঝোপ হতো। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যেত, বালুর নিচে চাপা পড়ত সেই ঝোপ-লতা। দুই-তিন বছর ধরে এই এলাকায় পদ্মা পাড়ের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাশফুল ফুটছে। ফুলে ফুলে পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। ভাদ্র মাসের শেষ থেকে ফুটতে শুরু করে। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। তবে কার্তিকের দিকে সাদার উজ্জ্বলতা কিছুটা হালকা হয়ে আসে। প্রতিদিনই এই কাশবনে ঘুরতে আসেন অনেক মানুষ। ছুটির দিনে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এই পর্যটকদের বেশির ভাগই স্থানীয়। শহর, শহরতলি ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাঁরা ঘুরতে আসেন।
চারদিকে ফুটে আছে কাশফুল। এ নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে তরুনী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল ইসলাম হব্বুল বলেন, ‘প্রকৃতিতে প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল ফুটে থাকে। পাকশীর কাশফুলের বন সে রকমই একটি। একসঙ্গে এত নিবিড় হয়ে ফুটে থাকা কাশফুল খুব বেশি জায়গায় দেখা যায় না। পদ্মা পাড়ে শিমুল, পলাশ, জারুলসহ দেশি জাতের ফুল গাছ লাগানো গেলে ভালো হতো। তাহলে বারো মাস কোনো না কোনো ফুল থাকত।’