উগ্রবাদ দমনে কাজ করা পারভেজের প্রাণ গেল সহিংসতায়

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গত অগাস্টে জঙ্গি অভিযান থেকে ফেরার পথে ছবিটি তুলেছিলেন পারভেজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ঢাকার দুই দলের সমাবেশের দিন সহিংসতায় যে পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, তিনি কাজ করছিলেন ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটে।

শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশস্থল নয়াপল্টনের আশপাশে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষের সময় আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের এ পুলিশ কনস্টেবল ঘটনাস্থলের কাছাকাছিই পুলিশের একটি দলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এ তথ্য জানিয়ে উগ্রবাদ দমনে গঠিত বিশেষায়িত এ ইউনিটের সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, বিজয়নগর এলাকায় সংঘাত ছড়ালে পারভেজ সেখানে যান। ওই এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে সংঘর্ষের সময় পুলিশ বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন। পরে হামলাকারীরা পুলিশ বক্সটিতে আগুন লাগিয়ে দিতে গেলে পারভেজ সেখান থেকে বের হয়ে একা হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, এসময় তার অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তার ওপর হামলা করা হয়। তার মাথায় যেভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা হয়েছে।

৩২ বছর বয়সী পারভেজ সিটিটিসির কর্মকর্তা শফিকুলের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছিলেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শফিকুল বলেন, উগ্রবাদ বিরোধী নানা অভিযানে পারভেজ দিন-রাত সঙ্গ দিয়েছে। সর্বশেষ মৌলভীবাজারের অভিযানেও সে দারুণ সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।

গেল অগাস্টেও পারভেজ মৌলভীবাজারে জঙ্গি বিরোধী অভিযানেও কাজ করেছেন দিনরাত এক করে। সেই স্মৃতি মনে করেই সিটিটিসির কর্মকর্তাদের অনেকেই চোখের পানি ফেলেছেন। তারা বলছেন, ওকে যারা এভাবে কুপিয়ে-পিটিয়ে মেরেছে তারাও সব ‘উগ্রবাদী’।

শাহজাহানপুর রেল কলোনির ভাড়া বাসায় স্ত্রী রুমা আক্তার আর সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকতেন পারভেজ। তার মেয়েটি সবে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পারভেজের লাশ শনাক্ত করেন তার ভাগ্নে সবুজ মিয়া।

তিনি জানান, ১২ বছর আগে পুলিশে যোগ দেন পারভেজ। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ, বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকান্দর আলী মোল্লা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আপনারা এখানে দেখেছেন এক পুলিশ সদস্য তাকে কীভাবে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। তাকে ঢিল ছুড়েছে, সে যখন পরে গিয়েছে, তখন তাকে মারা হয়েছে।

হত্যার তথ্যপ্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে কামাল বলেন, আমাদের কাছে ছবি রয়েছে এক ছাত্রদলের নেতা নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়েছে এবং শুধু পেটান নাই, তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার মাথাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে। এ দৃশ্য সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছে।