ধারের ১০ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ায় অটোরিকশাচালক হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন গৃহবধূকে: পুলিশ

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় গৃহবধূ তাসলিমা আকতার (২৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তরুণ শাকিব উদ্দিনকে (২৪) জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

নিহত তাসলিমা আকতার বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার ভাঙারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ধারের ১০ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে গৃহবধূ তাসলিমাকে হত্যা করেন অটোরিকশাচালক শাকিব উদ্দিন। শাকিব বগুড়া সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার তাসলিমার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী ও তাসলিমার পূর্বপরিচিত। হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ শাকিবকে গ্রেপ্তার করেছে। বগুড়া সদর থানায় করা হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য শাকিবকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ১৯ অক্টোবর দুপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বগুড়া শহরে বের হয়েছিলেন শাকিব উদ্দিন। শহরের নিশিন্দারা এলাকায় অন্য একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে শাকিবের অটোরিকশাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশেই তাসলিমার বাসা থেকে হাতুড়ি সংগ্রহ করে অটোরিকশা মেরামত করেন শাকিব। হাতুড়ি ফেরত দিতে আবার তাসলিমার বাসায় যান শাকিব। তাসলিমার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী ও পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাসলিমা বিস্কুট-চানাচুর খেতে দিয়ে শাকিবকে আপ্যায়নও করেন। একপর্যায়ে শাকিবকে আগের দেওয়া ধারের ১০ হাজার টাকা ফেরত চান তাসলিমা। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে তাসলিমার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন শাকিব। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাতুড়ির আঘাত তাসলিমার শিশুসন্তানের মাথায় লাগে। পরে আবার হাতুড়ি দিয়ে তাসলিমার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন শাকিব। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাসলিমা। পরে তাসলিমার তিন বছরের শিশুসন্তানের হাত পা বেঁধে অন্য কক্ষে আটকে রাখেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মুঠোফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে যান শাকিব। পরে ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকায় বাসা থেকে তাসলিমার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শুক্রবার লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্তভার পায় বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

নিহত তাসলিমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ব্যবসার কাজে বাসা থেকে বের হন। রাত আটটার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। এ সময় বাসার ডাইনিংরুমে ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। স্ত্রী-সন্তানের সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে দেখেন, মেঝেতে স্ত্রী তাসলিমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। পাশেই পড়ে ছিল রক্তমাখা হাতুড়ি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, তাসলিমা যে বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, পাশের বাসার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর সেই ফুটেজ দেখে তাসলিমা আকতারের খুনি শাকিবকে শনাক্ত করা হয়। ডিবি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সিসিটিভির ফুটেজে সকাল ১০টা ১১ মিনিটে শাকিব নিশিন্দারা এলাকায় তাসলিমার বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর অটোরিকশাটি বাসার সামনে রেখে যান। শাকিব ওই বাসায় প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থান করেন। ঘটনার পর ওই দিন রাতেই শাকিবকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আর এতেই বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।