রাজশাহী নগরের বর্ধিত এলাকার রাস্তাঘাট এখনো পানিতে ডুবে আছে। শনিবার দুপুরে নগরের মধ্যনওদাপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: বৃষ্টি থেমে গেছে। প্রধান শহরের পানিও নেমে গেছে। কিন্তু উত্তর দিকের বর্ধিত শহরের বাড়িঘর রাস্তাঘাট এখনো পানিতে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, শহরে সুন্দর রাস্তাঘাট, নর্দমা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সব পানি যেখান দিয়ে নামছে, সেখানে রয়েছে দুটি পুরোনো ছোট সেতু। সেই সেতুর কারণে পানি নামছে ধীরে। সেই সেতুই এখন পেছনের বড় সেতুটার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে বৃষ্টি থামলেও জনদুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। আরও সমস্যা হচ্ছে, নতুন ড্রেনে মহল্লার পানি নামতে পারছে না।
রাজশাহী নগরের সিটি বাইপাস সড়কের নিচ দিয়ে শহরের সব পানি একটি খাল হয়ে উত্তর দিকে বারোনই নদে গিয়ে পড়ে। এই সড়কের নিচে একটি উঁচু সেতু রয়েছে, কিন্তু তার সামনেই রয়েছে একটি পুরোনো ছোট সেতু। অনেক দিন আগে নির্মাণ করা সেই সেতু ছোট মুখ দিয়ে বেশি পানি যেতে পারছে না। ফলে নগরের নবনির্মিত ড্রেনগুলোর পানি বাধা পাচ্ছে ওই সেতুতে।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিন ওই সেতুর ওপর দিয়ে পানি পার হয়ে গেছে। আজ শনিবার সকাল থেকে সেতুর নিচ দিয়ে পানি পার হচ্ছে। কিন্তুর এর ছোট মুখ দিয়ে বেশি পানি পার হতে পারছে না। ফলে উজানে জলাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে। শুধু এই একটি সেতু নয়, তার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দক্ষিণের নেসকোর কার্যালয়ের সামনে একই মাপের আরেকটি সেতু রয়েছে। সেই সেতুর ছোট মুখ দিয়েও পানি স্বল্প পরিমাণে পার হচ্ছে। এতে নগরের ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা আজও ডুবে আছে। বাড়িঘর জলমগ্ন হয়ে আছে। মধ্য নওদাপাড়ায় অবস্থিত নেসকোর কার্যালয়ের পূর্ব পাশে দিয়ে যে রাস্তা মধ্য কয়েরদাঁড়া এলাকায় এসেছে। সেই রাস্তা ডুবে রয়েছে।
পানির অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা রাস্তা আর কোনটা ড্রেন। প্রায় সমান সমান পানি। সেই রাস্তা দিয়ে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা আগপর্যন্ত ড্রেনের ওপর তিনটি নিচু কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই কালভার্টগুলোও পরিকল্পিতভাবে করা হয়নি। এগুলোতেও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মধ্য কয়েরদাঁড়া এলাকা ডুবে রয়েছে। এই এলাকায় পলাশ নামের এক বাসিন্দাকে দেখা গেল প্রায় কোমরপানি ভেঙে মাথায় করে বাড়িতে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন।
এই এলাকার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তাঁর বাড়ি থেকে শনিবার সকালে পানি নেমেছে। কিন্তু বাড়ির চারপাশেই পানি রয়েছে। তাঁর দাবি এত উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার একটু ঘাটতি রয়েছে। এতে এমনভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে যে বড় ড্রেন থেকেই পাড়া-মহল্লার ছোট ড্রেনে পানি ঢুকে যাচ্ছে।
জহুরা বেগম বললেন, ‘বাড়ি থাক্যা পানি নামলেও বাথরুমের পানি সেচতে হইচ্ছে।’
আবু বকর সিদ্দিক এই প্রতিবেদকের সঙ্গে করে নগরের সিটি বাইপাস এলাকার সেই পুরোনো ছোট সেতু দেখাতে নিয়ে গেলেন। সড়কের নিচের বড় সেতুর সামনে এই ছোট সেতুটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবু বকর সিদ্দিকের প্রশ্ন, পাকিস্তান আমলের ছোট সেতুটা সরাতে বাধা কোথায়। কেনই-বা নেসকোর সামনে একই রকম ছোট সেতু রেখে দেওয়া হয়েছে। এতে শহরের এত সুন্দর ড্রেন করেও ষোলো আনা সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকাটি নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।
জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত আলী বলেন, ওটা কাউন্সিলরদের দেওয়ার প্রকল্পের কাজ নয়। প্রকৌশলীরা করেছেন। কাউন্সিলরদের প্রকল্প হলে তাঁরা আগেই ওই সেতু অপসারণের প্রস্তাব করতেন। আগামী ১২ অক্টোবর মেয়র দায়িত্ব নেবেন। তারপর তাঁরা ওই সেতু সরানোর ব্যবস্থা করবেন। আরও বড় দুর্ভোগের শিকার হয়ে আছেন নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেরখাদিয়া কলেজপাড়া মহল্লার বাসিন্দারা। ১৫ দিন ধরে তাঁরা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আছেন। এই মহল্লায় প্রায় ৪০০ পরিবার রয়েছে। তাদের মহল্লার পানি ড্রেনে নামার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। মহল্লার কোথাও কোমরপানি, কোথাও হাঁটুপানি। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে জাল পেতে মাছ ধরছেন। ড্রেনের পানি থেকে মহল্লার পানি দেড় ফুটের বেশি উঁচুতে রয়েছে। ড্রেনের পাকা দেয়ালে বাধা পেয়ে সেই পানি নামতে পারছে না।
বাধ্য হয়ে একদল লোক খুন্তি, শাবল, হাতুড়ি হাতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেখানেই দেখছেন মহল্লার পানির উচ্চতা ড্রেনের চেয়ে বেশি, সেখানেই ড্রেনের দেয়াল ফুটো করে দিচ্ছেন। শনিবার দুপুরে নগরের খ্রিষ্টানপাড়ার মোড়ে তাঁদের দেখা পাওয়া যায়। এই দলে রয়েছেন মহল্লার ৬ নম্বর গলির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। এমনকি গত জুমায় তাঁরা মসজিদে নামাজও পড়তে পারেননি। মহল্লার পাশ দিয়ে বড় ড্রেন গলেও মহল্লার পানি সেই ড্রেনে নামার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টো ড্রেনের উঁচু দেয়ালের কারণে আটকে আছে বৃষ্টির পানি।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, এই পুরোনো সেতুগুলো অনেক আগেকার। এগুলো অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ড্রেনের অন্য সমস্যাগুলোও সমাধান করা হবে।