মিয়া আরেফি | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি পাবনা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে পুলিশের হাতে আটক মিয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফির পাবনায় পৈত্রিক সূত্রে বাড়ি রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তিনি এই বাড়িতে আসতেন। তবে এখানে তাঁর আত্মীয়স্বজন তেমন কেউ নেই। বাড়ির আশপাশের মানুষ তাঁকে চেনেন ‘বেলাল’ নামে।

আজ সোমবার দুপুরে পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো একতলা একটি বাড়ি। লোকজন তেমন নেই। একজন ভাড়াটে সেখানে থাকেন। নাম মো. রইচ উদ্দিন। তিনিই বাড়িটি দেখভাল করেন।

রইচ উদ্দিন বলেন, বাড়ি থাকার কারণে মাঝেমধ্যেই মিয়া আরেফি পাবনায় আসতেন। মাস তিনেক আগেও একবার এসেছিলেন। তখন তাঁর সঙ্গে কিছু কথা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়। তাই ঢাকাতেই স্থায়ী নিবাস গড়ার চিন্তা করছেন।

রোববার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিয়া আরেফিকে আটক করে পুলিশ। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় জাহিদুল নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ঘটনায় রোববার জাহিদুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মহিউদ্দিন শিকদার বাদী হয়ে মামলা করেন। ওই মামলার বাকি দুই আসামি হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা মো. ইশরাক হোসেন। অপরের রূপ ধারণ ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

৩০–৩৫ বছর আগে এই বাড়ি ছেড়ে আমেরিকা চলে যায় জাহিদুল ইসলাম ওরফে মিয়া আরেফির পরিবার। আজ সোমবার পাবনা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়া আরেফি ওরফে বেলালরা ১০ ভাই–বোন। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার মানিকদিয়ার গ্রামে। তাঁর বাবা পাবনা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে পাবনা জেলা সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার শায়েস্তা খাঁ সড়কে জমি কিনে বাড়ি করেন। একসময় তাঁরা পরিবার নিয়ে এই বাড়িতেই থাকতেন। ৩০–৩৫ বছর আগে সপরিবারে আমেরিকা চলে যান।

মিয়া আরেফির প্রতিবেশী হাদুল মিয়া বলেন, বহু বছর আগে থেকেই তাঁরা পরিবারসহ আমেরিকায় থাকেন। পাবনার বাড়িতে এলেও তেমন কারও সঙ্গে মিশতেন না। তবে তিনি মহল্লায় বেলাল নামে পরিচিত ছিলেন। সবাই তাঁকে এ নামেই চেনেন।

আরেক প্রতিবেশী ইয়াসিন আলী মৃধা বলেন, মিয়া আরেফি পাবনা জেলা স্কুলে পড়তেন। ১৯৭৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি আগাগোড়াই একটু বেশি কথা বলেন। এ জন্য পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। তবে তাঁর অন্য ভাই–বোনেরা অনেক ভালো মানুষ।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়ার পর মিয়া আরেফির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। তবে পাবনার সঙ্গে তাঁর তেমন কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। শুধু একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে তাঁর কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। আগের কোনো অপরাধের তথ্যও পাওয়া যায়নি।