১০ বছর ধরে কালামের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় স্বজনেরা | ছবি: সংগৃহীত

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ: ছেলে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য বাড়ি ছাড়ার সাত মাস পর মা জানতে পারেন, তাঁর ছেলে থাইল্যান্ডের কারাগারে আটক আছেন। তারপর পাঁচ বছর নানাভাবে চেষ্টা করেও তিনি ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ছেলের ফেরার অপেক্ষা করতে করতে ২০১৮ সালে মা মারা যান। এই অক্টোবরে সেই ছেলের কারাবাসের ১০ বছর হচ্ছে। এ পর্যন্ত পরিবার শুধু কারাগারের বন্দীদের সঙ্গে থাকা তাঁর একটি ছবি জোগাড় করতে পেরেছে।

এই ছেলের নাম আবুল কালাম। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ২৪ বছর। তাঁর বাবার নাম আ. ছোবাহান। বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আজাগড়া গ্রামে। ২৩ বছর ধরে কালামের বড় ভাই আবদুল খালেক রাজশাহীর পবা উপজেলার হাজরাপুকুর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। কালাম তাঁদের সাত ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। এসএসসি পাস করে বড় ভাইয়ের কাছেই থাকতেন। স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতেন। তাঁদের মা রূপভানু বেগমও বড় ছেলের কাছেই থাকতেন।

আবদুল খালেক বলেন, থাইল্যান্ডে ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে চট্টগ্রামের আনোয়ার হাজি তাঁর ছোট ভাইকে নিয়ে যান। এ জন্য তিনি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর কালাম বাড়ি থেকে বের হন। নৌকায় ওঠার পর থেকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

একই নৌকায় কালামের সঙ্গে ছিলেন সিরাজগঞ্জের আবদুল হাকিম কালাম (৪৮)। তিনি মালয়েশিয়ায় ধরা পড়েছিলেন। কয়েক বছর কারাভোগ করে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরে কালামের মাকে বলেছিলেন, টেকনাফ থেকে নৌকা ছাড়ার পরেই কালাম বুঝতে পারেন, তিনি পাচার হয়ে যাচ্ছেন। তখন তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। তাঁর কথার জবাবে পাচারকারী চক্রের একজন বলেন, ‘এখানে আসা যায়, এখান থেকে যাওয়া যায় না।’

একইভাবে কয়েক বছর থাইল্যান্ডের কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরেন টাঙ্গাইলের ময়নাল মিয়া (৩৫)। তিনি এসে কালামের পরিবারকে বলেছিলেন, থাইল্যান্ডের কারাগারে কালামের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রফিকুল ও সবুরও একই কথা বলেছেন।

ময়নালের বাড়ি টাঙ্গাইলের চর আলিকদিয়াড় গ্রামে। তাঁর ফেরার কথা শুনেই কালামের মা ওই চরে ছুটে গিয়েছিলেন। ছেলে বাড়ি থেকে যাওয়ার সাত মাস পর ময়নালের কাছ থেকেই তাঁরা প্রথম জানতে পারেন যে তাঁর ছেলে থাইল্যান্ডের কারাগারে আটক আছেন। ময়নালকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কালাম। আসার পথে ময়নাল তা হারিয়ে ফেলেন।

কালামের বড় ভাই আবদুল খালেক বলেন, এখনো তাঁরা ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেননি। অথচ আনোয়ার হাজি তাঁর মাকে ‘মা’ বলে ডাকতেন। ধরপাকড় শুরু হলে আনোয়ার হাজি যে তাঁর ফোন বন্ধ করেন, তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

আবদুল খালেক বলেন, ভাইয়ের খোঁজে তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি। ভাইকে উদ্ধারের জন্য তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার), মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলার জেনারেল বরাবর আবেদন করেছেন। পুলিশের আইজি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে আবেদন করেছেন। ব্র্যাকের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ভাইকে পাচ্ছেন না।