বগুড়ায় চার মামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতা-কর্মী আসামি

পুলিশের গুলিতে শিশু আহত হওয়ার খবরে উত্তেজিত এলাকাবাসী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। রোববার সকালে বগুড়ার সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় রোববার হরতালের সমর্থনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মিছিল চলাকালে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, ইউএনওর সরকারি গাড়িতে ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধার অভিযোগে পৃথক চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও অনেকেই। তবে অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

চারটি মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল হামলা, ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনসহ অন্যান্য ধারায় চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে দুটি এবং ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আনসার সদস্য বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এই তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৩ জন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা আল রাজি জুয়েল বাদী হয়ে অপর আরও একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় আসামির সংখ্যা পরে জানানো হবে।

মামলার এজাহার, পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতালের সমর্থনে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে কিছু নেতা-কর্মী মিছিল বের করেন। সদর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে রানা প্লাজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ লাগে। পরে পুলিশ শটগানের ২০টি গুলি ছুড়ে বিএনপির ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ ঘটনায় বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম বাদী হয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা, ককটেল হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। হামলায় বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ আহত হয়েছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের সামনে গালাপট্টি সড়ক মোড়ে হরতাল সমর্থনকারীরা অবস্থান নেন। পুলিশ এ সময় মুন হোমিও হলের সামনে গালাপট্টি গোল চত্বরে অবস্থান নেয়। ১০০ গজের মধ্যে হরতাল সমর্থনকারী ও হরতালবিরোধীদের মুখোমুখি অবস্থানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লাগে। এ সময় কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল রাজিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে আল রাজি বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় বিএনপি-নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেছেন। তবে আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ মামলার আসামির নাম ও সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

গতকাল ভোর থেকেই সদর উপজেলার গোকুল খোলারঘর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পিকেটিং করছিলেন হরতাল সমর্থকেরা। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা (ইউএনও) পারভীনের সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউএনওর সঙ্গে থাকা আনসার সদস্য জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বগুড়া সদর থানায় ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে অনেককে।

হরতাল সমর্থকেরা গোকুল খোলারঘর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান না ছাড়লে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া থেকে ডিবির একটি টহল দল সেখানে গিয়ে শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। একপর্যায়ে গোকুল খোলারঘর জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশকে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়। একটু পর শত শত নারী-পুরুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় গ্রামবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশও গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে আরও তিন শিশু এবং একজন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হন।

এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রুম্মান হাসান বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানসহ ১৯ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে অনেককে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শটগানের ২৫টি গুলি ছোড়া হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, আজকের সহিংসতার ঘটনায় সদর থানায় পৃথক চারটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।