‘ওক বাঁচি রাখার দরকার নেই, ট্যাকা যা লাগে আমি দিব’

কুষ্টিয়া কুমারখালীতে উঠানে পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বুধবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রতিনিধি কুষ্টিয়া: ‘ওক কোনো রকম বাঁচি রাখার দরকার নেই। মেইরে ফেলুক। দুই–এক বিঘি জমি যায় যাবে ওর পেছনে। মরা লাশ আনতি হবি। মরা লাশ দেখব আমি। ট্যাকা যা লাগে আমি দিব। গলার ওপর পা তুইলি মাইরি ফেলুক। ট্যাকার হিসাব আমার করা আছে।’

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় স্বপন আলী (২৭) নামের এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার একটি ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে এমন কথা বলতে শোনা যায়। ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পেটানোর সময় নিহত ব্যক্তির চাচাতো বোন সুমি খাতুন মুঠোফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁর পরিবারকে দেখাচ্ছিলেন। ওই সময় অন্য আরেকজন ওই ভিডিও কলের ভিডিও করেন। সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বুধবার কুমারখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জালাল মোড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে স্বপন আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত স্বপন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। এ ঘটনায় গতকাল গভীর রাতে নিহত স্বপনের মা সায়েরা খাতুন বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার পর আটক নিহত স্বপনের চাচাতো বোন সুমি খাতুনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তার সুমি খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেছেন। আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কুমারখালীর যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, ওই বাড়িতে স্বপনের চাচাতো বোনের বিয়ে হয়েছে। গতকাল বিকেলেই স্বপনের লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে রাতেই চুয়াডাঙ্গায় লাশ দাফন করা হয়েছে।

স্বপনের বাবা আবদুর রশিদ বলেন, তাঁর ভাতিজির সঙ্গে স্বপনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভাতিজি তাঁর ছেলেকে ফোন করে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। পরে ওই বাড়ির লোকজন স্বপনকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যান।

নিহত স্বপন আলীর বাবার আহাজারি। বুধবার সকালে কুমারখালী পৌরসভার জালাল মোড় এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

ওসি আকিবুল ইসলাম বলেন, সুমি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে যখন স্বপন আলীকে পেটানো হচ্ছিল, তখন তিনি মুঠোফোনে তাঁর পরিবারের কাছে ভিডিও কল দেন। সে সময় তিনি মারধরের চিত্র ভিডিও কলে দেখান।

২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিও কলে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি স্বপনকে মাটিতে ফেলে শক্ত কিছু দিয়ে পেটাচ্ছে। মাঝে কয়েকবার বসার চেষ্টা করলে আবার পেটানো হয়। এ সময় ফোনের এক প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ইয়াসিন ভাই, মারেন।’

আরেক কণ্ঠে জোরে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘ওক কোনো রকম বাঁচি রাখার দরকার নেই, মেইরে ফেলুক। দুই–এক বিঘি জমি যায় যাবে ওর পেছনে। মরা লাশ আনতি হবি। মরা লাশ দেখব আমি। ট্যাকা যা লাগে আমি দিব। গলার ওপর পা তুইলি মাইরি ফেলুক। ট্যাকার হিসাব আমার করা আছে।’ আরেকজন বলছে, ‘মাইর হয়নি, মারেন। পায়ে মারেন। পা ভাঙি দেন।’ এ সময় ওই যুবককে জোরে জোরে পেটাতে থাকেন লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তি। পাশে কয়েকজনকে বসে এ ঘটনা দেখতেও দেখা গেছে। একপর্যায়ে স্বপন আলী নিথর হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যান।

ওসি আকিবুল ইসলাম বলেন, চাচাতো বোনের সঙ্গে পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। ভিডিও চিত্রের সূত্র ধরে তদন্তে ঘটনায় কারও কোনো ইন্ধন পাওয়া গেলে তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।