জাতীয় সংসদ ভবন | ছবি: সংগৃহীত |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করার ক্ষমতা পাচ্ছেন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। এ বিধান রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।
আজ সোমবার সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপনের অনুমতি চাইলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম আপত্তি জানান। তবে তাঁর আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। চলতি সংসদেই বিলটি পাস হতে পারে। এতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময় আনসার সদস্যরা তাঁদের নতুন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
বিলটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ফখরুল ইমাম বলেন, ‘কথায় আছে, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। এখানে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত হয়ে গেছে। পুলিশের কাজটা যদি বিভক্ত এবং সমান্তরাল করা হয়, তাহলে কাজটা করা যাবে না। দেশে সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর আলাদা আলাদা কাজ আছে। এলিট বাহিনীও করা হয়েছে।’
ফখরুল ইমাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তার জন্য আনসার বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এই বিল পাস হলে পুলিশ যা করে, আনসার বাহিনীও তা করতে পারবে।
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, দুর্যোগ এলে আনসার বাহিনীর সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে পরিমাণ সদস্য প্রয়োজন, পুলিশ বাহিনীতে এত পরিমাণ সদস্য নেই। এ পর্যন্ত ছয় লাখ আনসার সদস্য নিয়োগ করতে হয়েছে। নির্বাচনের সময় সমপরিমাণ আনসার সদস্য মোতায়েন করতে হবে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে ‘অগ্নিসন্ত্রাসের’ কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তখন দেশ অচল করে দেওয়ার সময় আনসার বাহিনী যানবাহন চলাচলের জন্য নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, পুলিশের সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে আনসারকে তৈরির পরিকল্পনা সরকারের নেই। প্রস্তাবিত বিলে কোনো সাংঘর্ষিক বিধান থাকলে তা সংসদীয় কমিটিতে সংশোধন করা যাবে।
পরে কণ্ঠভোটে ফখরুল ইমামের দাবি নাকচ হয়ে যায়। বিলটি তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আনসারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে পুলিশের মতো অপরাধ তদন্ত করার ক্ষমতা চেয়েছিল আনসার বাহিনী। তখন আনসারের প্রস্তাবের ব্যাপারে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূরুল হুদা বলেছিলেন, ফৌজদারি মামলা তদন্ত করার একমাত্র এখতিয়ার পুলিশের। তদন্ত করার জন্য পুলিশের মতো দুটি সমান্তরাল (প্যারালাল) বাহিনী গঠন করা ঠিক হবে না।
আনসারকে তদন্ত করার ক্ষমতা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধন করতে হবে। এতে পুলিশের মতো আনসার সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে তদন্ত করতে পারবে। এটি হবে অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত।
আজ সংসদে উত্থাপন করা বিলের ২১ ধারায় বলা হয়েছে, আনসার বাহিনীতে বিদ্রোহ সংঘটন বা বিদ্রোহ সংঘটনের প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। বিলে অপরাধ বিচারের জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত এবং বিশেষ আনসার আদালত নামে দুটি আদালত গঠনের কথা বলা হয়েছে।