মেহেদীকে আউট করার পর ইংলিশদের উদ্যাপন। আজ ধর্মশালায় | ছবি : আইসিসি |
ক্রীড়া প্রতিবেদক: বড় রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে আরও একবার ভেঙে পড়ল বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং। ডেভিড ম্যালানের সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের করা ৯ উইকেটে ৩৬৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ২২৭ রানে। তাতে ধর্মশালায় বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশ হারল ১৩৭ রানের বিশাল ব্যবধানে।
লিটন সর্বোচ্চ ৭৬ ও মুশফিকুর রহিম ৫১ রান করলেও ইংল্যান্ডের রানের পাহাড় টপকাতে যথেষ্ট হয়নি সেটি। ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন রিচ টপলি। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এই বাঁহাতি পেসার।
লক্ষ্যটা যখন ওভারপ্রতি ৭.২০ রানের, তখন প্রতি ওভারে একটি করে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করতেই হবে। লিটন দাসও সে মানসিকতা নিয়েই ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন। ক্রিস ওকসের করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটনের ব্যাট থেকে আসে হ্যাটট্রিক বাউন্ডারি।
তবে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডারের ভঙ্গুর চেহারা সামনে চলে আসে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। সহ-অধিনায়ক মঈন আলীর জায়গায় দলে আসা টপলি দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান ওপেনার তানজিদ হাসান ও নাজমুল হোসেনকে।
দুটি বলেই ছিল আউট সুইং। তানজিদ স্লিপে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দেন। পরের বলে স্কয়ার ড্রাইভ করতে গিয়ে লিয়াম লিভিংস্টোনের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল। তানজিদ ১ রান করলেও নাজমুল কোনো রান না করেই বিদায় নেন। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে টপলির বলেই বোল্ড সাকিব আল হাসান। ভালো লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলটি বাটলারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে স্টাম্পের বেল ছুঁয়ে যায়। ৯ বল খেলে ১ রানে থামে বাংলাদেশ অধিনায়কের ইনিংস।
৩ উইকেটে ২৬ রান থেকে বাংলাদেশ দ্রুতই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে বসে। এবার বোলার ওকস। পাঁচে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ অফ স্টাম্পের বাইরে কট বিহাইন্ড হন ১ বাউন্ডারিতে ৮ রান করে। ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। ৩৬৪ রান তখনই অসম্ভব লক্ষ্য মনে হচ্ছিল।
নিশ্চিত হারতে থাকা ম্যাচে ফিফটি করে ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন লিটন। প্রথম ওভারের দারুণ শুরুটা তিনি ধরে রেখেছেন ২১তম ওভার পর্যন্ত। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন ৭৫ বলে ৭২ রানের জুটি। ওকসের বলে আউট হওয়ার আগে ৬৬ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছেন লিটন, ৭টি চার ও ২টি ছক্কা ছিল তাঁর ১১৫ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।
ফিফটি করে আউট হয়ে যান মুশফিকও। ৩১তম ওভারে টপলির চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরার আগে ৬৪ বলে ৫১ রান করেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাতে নামা তাওহিদ হৃদয়ের ৬১ বলে ৩৯ রান দলের হারটাকে শুধু প্রলম্বিতই করতে পেরেছে।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের সময় উল্টো চিত্রই দেখা গেছে। ওয়ানডে ম্যাচে বড় রান করার ফর্মুলা কেমন হওয়া উচিত, তা দেখিয়েছেন ইংলিশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড ম্যালানের উদ্বোধনী জুটিতেই ১১৫ রান পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
বেয়ারস্টো সেরা ফর্মে না থাকলেও তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৫৯ বলে ৫২ রানের ইনিংস।
দারুণ
ছন্দে ছিলেন ম্যালান। ৯১ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই বাঁহাতি। ওয়ানডেতে এটি
তাঁর ষষ্ঠ সেঞ্চুরি, এ বছরে চতুর্থ। শেখ মেহেদীর বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে
বোল্ড হওয়ার আগের ১৬ বলে আরও ৪০ রান যোগ করেন এই বাঁহাতি। ১০৭ বল খেলে ১৪০
রান করেন ম্যালান, ১৬টি চার ও ৬টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে।
তিনে নামা জো রুটও বড় ইনিংস খেলেছেন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৬৮ বলে ৮১ রান, ৮টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে। দুজনের ১৫১ রানের জুটি ভাঙার পর প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি ইংলিশদের ইনিংস। শরীফুল ইসলাম ও শেখ মেহেদী হাসানের ডেথ ওভারের বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের ঝোড়ো গতি কমে আসে ভালোভাবেই।
ইংল্যান্ডের শেষ ৮ উইকেট পড়েছে মাত্র ৯৬ রানে। শেষ ১০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা তুলতে পেরেছে ৬৬ রান। অথচ এর আগের ১০ ওভারেও তারা তুলেছিল ১১০ রান। ৩০৭/৩ থেকে ৩৬২/৯—ধসটা বোঝাতে এটুকু বলাই যথেষ্ট। তবে এরপরও বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৬৫ রান, যার অনেক আগেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে ৮ ওভারে ৭১ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন শেখ মেহেদী। শরীফুল ১০ ওভারে ৭৫ রানে নেন ৩ উইকেট। ডেথ ওভারে এই দুজনের বোলিং বাদ দিলে আজ বাংলাদেশ দলের বোলিংটাও ছিল নির্বিষ। এমন ব্যাটিং আর বোলিং করে আর যা–ই হোক ইংল্যান্ডের সামনে দাঁড়াতে পারার কথা নয় বাংলাদেশের।