রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি রাজশাহী: ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর দ্বিতীয় দিনও উত্তপ্ত ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন কমিটিকে ‘বিতর্কিত’ দাবি করে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ‘কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া’ নেতা-কর্মীরা গতকাল সোমবার দুপুর থেকে রাত ১২টার পর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মহড়া দেন। আবাসিক হলগুলোতে সন্ধ্যার দিকে মহড়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটানো হয় অন্তত ১০টি ককটেল। এর আগের দিন রোববার সন্ধ্যায়ও ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়।

কমিটি ঘোষণার তৃতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার কথা রয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটিতে পদ পাওয়া নেতাদের। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে তাঁরা ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে আসবেন। পরে রাজশাহী সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অন্যান্য কার্যক্রমের পর দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে তাঁদের প্রবেশ করার কথা রয়েছে।

নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁরা আজ ঢাকা থেকে রাজশাহী যাবেন। পরে ক্যাম্পাসে যাবেন। তাঁদের সঙ্গে নেতা-কর্মীরা থাকবেন।

এদিকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঠেকাতে আজও একই কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রলীগের আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। এই আন্দোলনকারীদেরও বড় অংশ নতুন কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তবে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘোষিত কমিটি বিতর্কিত।

আজ সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে অবস্থানের ঘোষণা দিলেও বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত তাঁদের ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে তখন পর্যন্ত কেউ আসেননি।

নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি দাবি করে আন্দোলন করছেন। গতকাল সোমবার রাত ১২টার দিকে তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাসে আমরা প্রবেশ করতে দেব না। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

এদিকে আজ ক্যাম্পাসে নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রবেশ করলে সংঘর্ষ বাঁধতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টের পেছনে চায়ের দোকান চালান মো. এনামুল হক। তিনি ‘এনামুল ভাই’ হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে একটি পক্ষ আন্দোলন করছে। তাঁরা অন্য একটি পক্ষকে ঠেকাবে। এ জন্য ককটেলের আওয়াজ আসছে। দুপুরের পর তেমন পরিস্থিতি হলে চায়ের দোকান বন্ধ করে চলে যাবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ বলেন, সংগঠনের প্রতি আবেগ ও ভালোবাসা থাকলে ছাত্রলীগের ক্ষতি হয়, এমন কিছু কেউ করবেন না। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কোনো কাজে ছাত্রলীগের যুক্ত হওয়ার কথাও নয়। এরপরও কারও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

শেখ ওয়ালি আসিফ আরও বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এটা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা করার কোনো সুযোগ নেই।

মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে গত শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদিত এই আংশিক কমিটিতে ২০ জনকে সহসভাপতি করা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছেন আটজন। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ৯জন। পদপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্তত চারজনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে। যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ আছে।