ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা: চালক, সহকারী চালক ও গার্ডকে অভিযুক্ত করে নিহতের পরিবারের মামলা

দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ভিড়। মঙ্গলবার সকালে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ভৈরব: কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলায় মালবাহী ট্রেনটির চালক জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী চালক আতিকুর রহমান ও পরিচালক (গার্ড) মো. আলমগীরকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয়।

আজ বুধবার সকালে ভৈরব রেলওয়ে থানায় ‘বেপরোয়া, গাফিলতি ও তাচ্ছিল্য পূর্ণভাবে’ ট্রেন পরিচালনার ধারায় মামলাটি করেন দুর্ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের ছোট ভাই বিল্লাল হোসেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে নজরুলের মৃত্যু হয়। নজরুল নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সররাবাদ গ্রামের দর্শন মিয়ার ছেলে। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভৈরব পৌর শহরের আমলাপাড়ায় থাকতেন।

পুলিশ জানায়, এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতি আর তাচ্ছিল্য ছিল বলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি হয়। একটি দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ হতাহত হন। এতে অনেক যাত্রীর জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। নজরুলের পরিবারেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে দুর্ঘটনা ঘটত না। এত মানুষের ক্ষতিও হতো না।

একই সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে পাচ্ছে না পুলিশ। এমনকি দুর্ঘটনার পর রেলওয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে থানায় লিখিত তথ্য পাঠানোর নিয়ম থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এ কারণে ট্রেনের চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় পেতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। বিষয়টিকে এক ধরনের অসহযোগিতা হিসেবে দেখছে রেলওয়ে পুলিশ।

মামলার বাদী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি ভাই হারিয়েছি। আরও অনেকে পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন। আমরা কেউ কোনো কিছুর বিনিময়ে তাঁদের আর ফিরে পাব না। কিছু মানুষের খামখেয়ালির কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কোনো দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি হয় না। শাস্তি হয় না বলেই অবহেলা বাড়ছে। শাস্তির আওতায় আনার জন্যই মামলাটি করেছি।’

ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলীম হোসেন শিকদার বলেন, মামলার ধারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুই চালক ও এক গার্ড ছাড়াও এজাহারে ট্রেন পরিচালনার আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষের কারও দায়িত্বের অবহেলা ছিল কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ট্রেনচালক জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত অন্য দুজনের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ আছে।

স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্ঘটনার পর থেকেই তাঁরা নিজেদের আড়াল করে রেখেছেন। পরদিন তিন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এর পর থেকে তাঁরা কর্মস্থল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনের দুই বগিতে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।

দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে এখন পর্যন্ত সরকারের তিনটি বিভাগ চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুটি, জেলা প্রশাসন থেকে একটি, অন্যটি ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।

রেলওয়ে পুলিশের করা অভিযোগ বিষয়ে ভৈরব স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, অভিযোগ ঠিক নয়। তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও গার্ডের নাম পরিচয় পাঠানো হয়েছে।