একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা...

পাবনার বেড়া উপজেলায় যমুনার চরের কাশবন। মোহনগঞ্জ এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বরুন রায়, পাবনা: চারদিকে যমুনার স্বচ্ছ পানি। ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। আর এর মধ্যে নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরের যেদিকেই চোখ যায়, শুধু শুভ্র রঙের খেলা। প্রকৃতির দানে চরের মাটিতে ঘন হয়ে জন্ম নেওয়া কাশবনের কারণেই এমন সৌন্দর্য। দোল খাওয়া কাশফুলের এই সৌন্দর্য যে কারও মনে দেয় প্রশান্তির ছোঁয়া। তাই দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে।

অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যাবে পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা নদীর দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা, চরনাকালিয়া, চরসাঁড়াশিয়া ও চরসাফুল্লায়। ভ্রমণপিপাসুরা সবচেয়ে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায়। উপজেলা সদর থেকে যমুনা পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানো বেশ সহজ।

দক্ষিণ চরপেঁচাকোলায় সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও ঠাস বোনা গুচ্ছ। হঠাৎ মনে হবে, সেখানে সাদা চাদর বিছানো। হাওয়ায় দুলছে, নেচে উঠছে কাশফুল। চরের যে অংশে কাশবনের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জনবসতি নেই। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে এসেছেন। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন, কেউ আবার কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। শিশুরা কাশবনে বেশ ছোটাছুটি আর খেলাধুলা করছিল।

স্থানীয় লোকজন জানান, বেড়া উপজেলার যমুনার চরগুলোয় ভাদ্র মাসের শেষ দিকে কাশফুল ফুটতে শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে। আর এই সময়টায় কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে দর্শনার্থীরা এখানে ভিড় করেন। পুরোনো চরগুলোর জনবসতিহীন অংশে আর নতুন চরের প্রায় পুরো অংশেই কাশবন।

এ যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার মতো ‘চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা/একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।’ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

বেড়া পৌর এলাকার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা চরের কাশবনে বেড়াতে এসেছেন। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই এই চরগুলোর পরিবেশ মুগ্ধ হওয়ার মতো। এর ওপর একসঙ্গে এত কাশফুল মনে শান্তি এনে দেয়। আমি এর আগেও এখানে এসেছি। ভালো লাগে বলেই পরিবারের সদস্যসহ কলেজের সহকর্মীদের জায়গাটি দেখাতে এনেছি।’

বেড়াতে আসা বেড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, ‘এখানে এলে যে কারোরই মন ভালো হয়ে যায়। পরিবারসহ এসে আমাদের সবারই খুব ভালো লাগছে। ছবি তুললাম। এখানে দারুণ সময় কাটল!’

চরের বাসিন্দা ও দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘তিন থেকে চার বছর ধরে এখানে ফুল ফুটছে। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়।’