ঈশ্বরদীতে হরতাল-অবরোধে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে ট্রেন, নিরাপত্তায় জোর

রেললাইন পাহারায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী। মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা ৩ দিনের সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও সরকারি পরিবহন ট্রেন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করছে। ট্রেন চলাচল নিরাপদ করতে রেলওয়ের লোকো মাস্টার, সহকারী লোকো মাস্টার এবং সাব লোকো মাস্টারদের হেলমেট পরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ট্রেনের বিভিন্ন স্টেশনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। টহলে রয়েছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও।

মঙ্গলবার সকালে ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গিয়েছে, প্রবেশপথের মুখেই এক পাশে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী অন্য পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীরা আতংকের মধ্যে থাকলেও তাদের এই পরিবেশ দেখে আতংক কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে সকাল থেকেই প্রতিটি ট্রেনে নির্ধারিত সময় ছেড়েছে।

এছাড়াও মুলাডুলি, ঈশ্বরদী বাইপাস, পাকশী, রূপপুর ও দাশুড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে অতিরিক্ত পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য (আরএনবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলে বর্তমানে ৯৫টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেন পরিচালনায় লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার (এসএলএম) নিয়োজিত রয়েছেন ১৩৬ জন।

রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ পাকশী অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, ট্রেনে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমরা বলেছি। এ ছাড়া হেলমেট পরার নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। তবে আমরা কিছু বিষয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। ট্রেনের গতি কোথাও কোথাও ৬০, ৭০ বা ৮০ কিলোমিটার রাখা হচ্ছে।

রেলপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবির কুমার দাশ, সহকারি কমিশনার (ভূমি) টি এম রাহসিন কবির ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ। মঙ্গলবার দুপুরে ঈশ্বরদী জংশন রেলওয়ে স্টেশনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

সুমন্ত সাহা নামে ট্রেনের এক যাত্রী বলেন, আমি টুঙ্গিপাড়া থেকে ঈশ্বরদী আসলাম। আসার সময় অনেকটা শঙ্কায় ছিলাম কেউ নাশকতা করে কি না। তবে নিরাপদে পৌঁছেছি পথে কোনো ধরনের নাশকতা হয়নি। আসার পথে দেখলাম প্রতিটি ট্রেনে ঠিকঠাক লাইন ধরে চলাচল করছে। কোনো লাইনের পাশে মানুষের জটলা নেই।

পাকশী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিদর্শক ফিরোজ আহমেদ জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসেনি। রেল চলাচল স্বাভাবিক আছে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে, ফোর্স বেশি আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন রেলের যান্ত্রিক বিভাগ থেকে লোকো মাস্টারদের হেলমেট বিতরণ করা হয়েছে। তা পরতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি), রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) সদস্যরা। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে। 

তবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন অবরোধের চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। তখন রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সতর্ক অবস্থানের কারণে তাঁরা সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। এ শহরের ফতেমোহাম্মদপুর লোকোমোটিভ ডিজেল কারখানা এলাকার পাশে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে রেলওয়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়।

রেলপথে নাশকতা প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন