ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। ঢাকা, ২৯ অক্টোবর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতিবিরোধী গীতি-কাব্য-নাট্যালেখ্য এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ‘সংস্কৃতির সংগ্রামে দ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির লড়াইয়ে অজেয় শক্তি’ স্লোগান নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুরু হয় অনুষ্ঠান।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনা এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। এরপর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বার্ক্ আলভী। উদীচীর লড়াই–সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সংগঠনের অগ্রগতির প্রত্যাশা করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দেওয়া চিকিৎসক সংস্কৃতিজন কাজী তামান্না বলেন, বিত্তবৈভবের চেয়ে যে মানুষ বড়, সেই বোধ তৈরি করে গিয়েছিলেন সত্যেন সেনের মতো মানুষেরা। তাই তাঁরা শ্রমিক, কৃষক, সাধারণ মানুষের কথা বলার জন্য তৈরি করেছিলেন উদীচীর মতো সংগঠন। তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে আসে সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্তর অবদানের কথা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমি’ (আমারই চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ) কবিতার প্রথম অংশ পাঠ করেন অধ্যাপক কাজী মদিনা। প্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বাঙালি সংস্কৃতির একটি অনির্বাণ বাতিঘর। ‘সংস্কৃতির সংগ্রামে দ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির লড়াইয়ে অজেয় শক্তি’ স্লোগানটি উল্লেখ করে কাজী মদিনা বলেন, সংস্কৃতির সংগ্রামই পারে দেশের চলমান সংকট দূর করতে।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান বলেন, উদীচী একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন। উদীচীর আদর্শ মুক্তিযুদ্ধে পাওয়া বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চার নীতি। তিনি বলেন, রাজনীতির সংস্কৃতি গড়ে না উঠলে সে দেশের মানুষ পরিপূর্ণভাবে মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে কাজ করে যাওয়াই উদীচীর অন্যতম লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংস্কৃতিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয় অধ্যাপক কাজী মদিনা ও শিল্পী আনোয়ার হোসেনকে। আলোচনা পর্বের সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক সংগীতা ইমাম।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দেসহ বক্তব্য দেন সংগঠনের আরও কয়েকজন সদস্য। আলোচনায় উদীচী প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, সে সময়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং সংগঠনের দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলেন বক্তারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। উদ্বোধন ঘোষণা, অতিথিদের বরণ এবং সম্মাননা প্রদনের পর ছিল ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পর্ব। এ পর্বে অংশ নিয়েছেন মাহমুদ সেলিম, হাবিবুল আলম, সুরাইয়া পারভীনসহ অনেক শিল্পী। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচীর কেন্দ্রীয় সদস্য শিখা সেন গুপ্তা ও কংকন নাগ।
১৯৬৮ সালে বিপ্লবী, কথাশিল্পী সত্যেন সেনের হাত ধরে শুরু হয় এ দেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচীর পথচলা। রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লা কায়সার, কামাল লোহানীসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ যুক্ত হয়েছেন উদীচীর বিভিন্ন পর্বে। মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্যের সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করে আসছে উদীচী।