রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চেম্বারে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

শিশু যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এক শিশুকে (১৩) যৌন হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় মঙ্গলবার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছেন।

সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরের তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম রাজু আহমেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। এ ঘটনায় তাঁর শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।

এদিকে এ ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাইমারি মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর ভাগনে রাসেল। হামলায় আহত হয়ে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ভুক্তভোগী শিশুর মা বলছেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর একটু হাতাহাতি হয়েছে। এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলার শিকার বলে চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিশুর মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাঁকে বোন বলে ডাকেন রাজু। সেই সম্পর্ক থেকে রাজু আহমেদের কাছে মেয়ের নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আমেনা ক্লিনিকের নিচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে মেয়ের চিকিৎসা করাতে যান। পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মুঠোফোনে কল এলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এই সময় ওই চিকিৎসক তাঁর মেয়েকে যৌন হয়রানি করেন। এতে তাঁর মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেয়। এরপর তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে তাঁর মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।

ভুক্তভোগীর মা বলেন, এ ঘটনার পর চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুজন দুজনের দিকে মারতে তেড়ে গেলে একটু হাতাহাতি হয়। পরে তিনি হার্টের অসুখে  বসে পড়েন। এ ঘটনাকেই রাজু আহমেদ বিকৃত করে হামলা বলছেন।

মানববন্ধন শেষে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে আজ সকালে একটি মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে রাজু আহমেদের মুঠোফোনে আজ যোগাযোগ করা হলে তাঁর ভাগনে পরিচয় দিয়ে রাসেল নামের একজন ফোন ধরেন। তিনি বলেন, রাজু আহমেদ ঘুমাচ্ছেন। এখন কথা বলতে পারবেন না।

অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে অভিযুক্ত চিকিৎসক রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতের দাবিতে আজ দুপুর ১২টার দিকে প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। তাঁরা অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, রাজু আহমেদ একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। যে নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না; তাঁর শুধু চাকরি নয়, তাঁর চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কী বলব, বুঝতে পারছি না।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক দিল সেতারা চুনি প্রমুখ। এ ছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রিজাউল করিম শেখ, তৌফিক আলম, সৈয়দ এম এ ছালাম, এ নাঈম ফারুকী, ছাইফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ভুক্তভোগীর শিশুর পরিবার এসে দেখা করেছেন। একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা ছাড়া যেহেতু একটি মামলা করা হয়েছে, মামলাটি রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে।