পাবনায় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবাধে ইলিশ শিকার, নদীপাড়েই চলছে বেচাকেনা

পাবনার বেড়া উপজেলার যমুনা পারের কাজীশরিফপুর গ্রামের একটি বাড়িতে চলছে ইলিশ বেচাকেনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ রক্ষায় সরকার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পাবনার বেড়া উপজেলায় অবাধে ইলিশ শিকার চলছে। দিনের বেলা প্রশাসনের নজরদারি থাকায় রাতের বেলা পদ্মা ও যমুনা নদীতে নামছেন জেলেরা। নদীর তীরে হাট বসিয়ে বা গ্রামে ফেরি করে সেই ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে।

বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেড়া উপজেলার যমুনাপারের কাজী শরীফপুর, দাসপাড়া, নটাখোলা, কাজীরহাট ও পাইখন্দ গ্রাম ঘুরে অবাধে ইলিশ বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এ সময় যমুনা ও পদ্মা নদী থেকে ইলিশ ধরে কয়েকটি নৌকাকে তীরে ভিড়তে দেখা যায়। তীরে অপেক্ষমাণ অনেক ক্রেতা নৌকা থেকেই ইলিশ কিনেছেন।

নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে গত ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞা পার হলেই শেষ হবে ইলিশের মৌসুম। এরপর নভেম্বর থেকে আট মাসের জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে।

জেলেরা বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিকে নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যায়নি। কিন্তু সপ্তাহখানেক হলো প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। পদ্মা ও যমুনার পাড়ে একরকম হাট বসিয়ে ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর বিক্রির জন্য গ্রামের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রেফ্রিজারেটর ভর্তি করে ইলিশ রাখা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজিরহাট ফেরিঘাট থেকে কিছুটা দূরে কাজী শরীফপুর গ্রাম ও দুর্গম চর কাজীপাড়া গ্রামে সবচেয়ে বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। কাজী শরীফপুর যমুনা পাড়ে এবং কাজীপাড়া পদ্মাপাড়ের একেবারে কাছের গ্রাম। দুই গ্রামের মধ্যে দূরত্ব দুই থেকে তিন কিলোমিটার। গ্রাম দুটির দিকে কেউ গেলেই বিক্রেতারা ইলিশ কেনার প্রস্তাব দিচ্ছেন। কিনতে রাজি হলে নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের ভেতরে বাড়িতে। ইলিশ দেখিয়ে দরদাম করে বিক্রি করা হচ্ছে।

কাজিরহাট, কাজী শরীফপুর ও নটাখোলা গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে। আর এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার রঘুনাথপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক বলেন, তাঁদের সমিতিতে প্রায় ৩৫০ জেলে আছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০০ জন ২৫ কেজি করে চাল পেয়েছেন। এই চালে একটা পরিবারের কদিন চলে? শুধু অভিযান করলেই হবে না। জেলেদের সহায়তার ব্যবস্থাও করতে হবে। ঘরে অভাব থাকায় অনেক জেলেই পেটের তাগিদে নদীতে নামছেন।

কাজী শরীফপুর ও নটাখোলা গ্রামের কয়েক জেলে বলেন, রাতের বেলা প্রায় ১৫০ নৌকায় জেলেরা ইলিশ ধরতে নদীতে নামছেন। দিনের বেলা উপজেলা প্রশাসনের অভিযান থাকায় জেলেরা নদীতে খুব একটা নামেন না। রাতের বেলা টহলে থাকে নৌ পুলিশ। নৌ পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই জেলেরা নদীতে নামছেন। আবার যে জেলেরা নৌ পুলিশকে না জানিয়ে ইলিশ ধরতে গিয়ে ধরা পড়ছেন, তাঁদের ছাড়া পেতে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা লাগছে।

অভিযোগের বিষয়ে কাজীরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহিদুল ইসলাম বলেন, টাকার বিনিময়ে ইলিশ ধরায় অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারটি একেবারেই মিথ্যা। নৌ পুলিশের কেউ এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। কাজী শরীফপুরসহ কয়েকটি গ্রামে ইলিশ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, খুব দ্রুত ওই গ্রামগুলোতে অভিযান চালানো হবে। নগরবাড়ী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক হোসেনও একই ধরনের কথা বলেন।

বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই পুলিশের সহায়তায় কঠোর অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। গত ১৪ দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাতটি, স্থল ও নৌ পুলিশের মাধ্যমে ১৫টি এবং তিনি এককভাবে ৩০টি অভিযান চালিয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যমুনায় ইলিশ ধরার জন্য নৌকায় কারেন্ট জাল সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পাবনার বেড়া উপজেলার নটাখোলা ঘাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এতে ১১টি মামলার পাশাপাশি ৮০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে যেভাবে বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যে নৌকাগুলো নদীতে নামছে, তাতে ছোট আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে রাজবাড়ীতে ধরা কিছু বড় ইলিশ এলাকায় আসতে পারে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রমাণ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজীরহাট নৌ পুলিশ মা ইলিশ রক্ষায় খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জেনেছেন।