রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে শিকড় পরিবহনের একটি বাসে রোববার সকাল নয়টার পরে আগুন দেওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিনিধি: এক দুপুরের সংঘর্ষে ভেঙে গেল বিএনপির দীর্ঘদিনের হরতাল-সংযম; আবার পুড়ল যানবাহন, পড়ল লাশ; সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শেষে বিএনপির তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধের ডাকে ফিরে এল আট বছর আগের স্মৃতি।

শনিবারের সমাবেশ ঘিরে উদ্বেগের মধ্যে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির কী কর্মসূচি আসছে তা নিয়ে জনমনে জিজ্ঞাসা ছিল। কিন্তু রাজধানীর কাকরাইল থেকে ছড়িয়ে পড়া সেই সংঘাত পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে।

নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরানোর আন্দোলনে থাকা দলটির নেতারা সহিংসতার পথ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে থাকার যে কথা এতদিন বলে আসছিলেন সেখান থেকে হঠাৎ এক ঘটনাতেই সরে গেলেন; রাজনৈতিক আন্দোলনের সেই পুরনো অস্ত্র ব্যবহারের পথেই হাঁটলেন তারা।

পদযাত্রা আর সমাবেশের মত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বদলে হরতাল-অবরোধ ঘোষণার মধ্যেই বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা আন্দোলনে ‘কঠোর থেকে আরও কঠোর’ হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন।

আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের আগে পরস্পরবিরোধী দুই বড় দলের মধ্যে সমঝোতা হবে এমন প্রত্যাশায় থাকা অন্যসব পক্ষের কাছেও বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা অতীতের মতো জ্বালাও পোড়াওয়ের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত বলে ঠেকছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের ডাকে টানা তিন মাস ধরে চলা হরতাল-অবরোধের মধ্যে নজিরবিহীন নাশকতা ও সহিংসতা দেখেছিল বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ নেতারা যাকে বলেন বিএনপির ‘আগুন সন্ত্রাস’।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের বদলে পুরনো সেই সহিংসতার ফিরে আসার শঙ্কা করছেন। তাদের প্রত্যাশা নির্বাচন ঘিরে ফিরে আসা সেই উত্তাপ কমে দলগুলো সংলাপে বসে সমঝোতার পথ বাতলে নেবে।

আর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি এর মাধ্যমে নিজেদের ‘স্বরূপ’ প্রকাশ করে ফেলেছে।

অপরদিকে বিএনপি নেতারা এমন পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের একগুঁয়েমি মনোভাবকে দায়ী করেছে। তারা বলছেন, সরকার কোনো সমঝোতা করতে চায় না বলেই বিএনপিসহ বিরোধী দলকে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়েছে।

সংঘর্ষের জেরে নয়াপল্টনে শনিবারের মহাসমাবেশ পণ্ডের পর হরতাল ডেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা নিরাপদে সরে যান। মহাসচিব বাসায় ফিরলেও অন্য নেতারা গেছেন আত্মগোপনে। রোববার সকালে ফখরুলকে আটক করে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। অন্য নেতাদের খুঁজছে পুলিশ।

আড়ালে থাকা শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিএনপি এখন কোন পথে যাবে জানতে চাইলে তারা ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক দফা কর্মসূচির কথাই বলেন। এ কর্মসূচি আগের চেয়ে কঠোর হবে বলে ইঙ্গিতই ছিল তাদের কথায়। 

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালের মধ্যে রোববার সকালে তাঁতিবাজার মোড় এলাকায় বাসে আগুন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জ্যেষ্ঠ এক নেতা সবশেষ নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে পুলিশি হামলার উদাহরণ তুলে ধরে পাল্টা প্রশ্ন করেন, এরকম অবস্থা যদি হয় সেক্ষেত্রে একটি বিরোধী দলের অবস্থান কী হতে পারে?

প্রায় ৪৫ মাস পর ফিরে আসা হরতাল শেষে রোববার সন্ধ্যায় মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আবার তিন দিনের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি।

দলটির নেতারা বলছেন, এক দফার আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত’ পর্যায়ে ধারাবাহিক আন্দোলনেই থাকবেন তারা।

দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কর্মসূচিতে ধারাবাহিকতা রেখে সেভাবেই এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচির ছক তৈরি করা হয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এক দফা আন্দোলন থেকে বিএনপি পিছপা হবে না। ওরা যত দমনপীড়ন করুক না, যত গ্রেপ্তার করুক না কেন, যত মিথ্যা গায়েবি মামলা দেক না কেন, আন্দোলন থেকে আন্দোলন চলছে, চলবে।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে।  শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি পরের বছর দিনটিতে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচিতে বাধা পেয়ে লাগাতার অবরোধ ডেকেছিল।

তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, পোড়ানো হয় বহু গাড়ি। আন্দোলনে সরকার হঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর এপ্রিলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। এরপর বছরের শেষে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনেও অংশ নেয় তারা।

তবে আগেরটি বর্জন করলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলটির ভরাডুবি হয়। তখন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ জানিয়ে আসছে দলটি। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরানোর দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি।

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় রমনা মডেল থানার মামলায় গ্রেপ্তার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার রাতে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজনীতি ঘিরে ২০১৫ সালের সহিংসতা ও অস্থিরতা নিয়ে এখনও মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাটেনি। এবারও এমন দিন ফিরে আসছে কি না সেই শঙ্কা উঁকি দেওয়ার কথা বলেছেন অনেকেই।

যদিও বিএনপি নেতা রিজভী বলছেন, কঠোর হলেও কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা কোনো সহিংসতাতে বিশ্বাসী না। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগুব।

তবে এমন কঠোর অবস্থান কেন- তা নিয়ে নেতাদের বক্তব্য নানা রকমের।

এক নেতার অভিযোগ, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর কী নির্যাতন করেছে তা মামলার খতিয়ান নিয়ে বসলেই বোঝা যাবে। আপনারা একুট ভেবে দেখুন, ৪২ লাখ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা।

শনিবার নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড, দলের নেতৃত্ব পর্যায়ের নেতাদের আত্মগোপন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন বিএনপি কোন পথে যাবে? সরকারের ছাড় না দেওয়ার মানসিকতায় বিএনপি তার নীতিকৌশলে পরিবর্তন আনছে? 

সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনের থাকলেও তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। রোববারও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং পরবর্তি করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। 

একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল দলের মহাসচিবসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তারে কোনো প্রভাব আন্দোলনে পড়বে কি না। 

জবাবে তারা বলছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সরাসরি পরিচালনায় ‘যৌথ নেতৃত্বে’ পরিচালিত হচ্ছে দল। এখানে কারও গ্রেপ্তারে নেতৃত্বে সংকট হবে না। সেইভাবে নেতৃত্ব ‘ঠিক’ করা আছে।

শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের মঞ্চের সামনে আগুন ধরিয়ে দেন বিএনপির নেতাকর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নীতিনির্ধারকরা বলেন, এই ‘অলআউট’ বা ‘সর্বাত্মক আন্দোলনে’ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হবে সেটা মাথা নিয়েই সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।

সমাবেশে যোগ দিতে কুমিল্লা থেকে আসা যুবদলের কর্মী সোহরাব হাসান আগের দিন বলেছিলেন, আমরা জানি না কী হবে সামনের দিনগুলোতে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগোতে হবে। আমরা দলের নেতাদের কাছে পরবর্তি কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আছি। যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত।

নোয়াখালীর মহিলা দলের নেত্রী ফরিদা আখতার বন্যা বলেন, সরকার ভেবেছে নেতাদের গ্রেপ্তার ‘১৪ ও ’১৮ সালের মতো ক্যারিকাচার করে ভোট করবে। এবার কিন্তু সেটা হবে না। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে সেভাবেই হোক এবার হবে আন্দোলনের ফলাফল রাজপথেই হবে।

কী ভাবছনে বিশ্লেষকরা
নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলন ও সহিংসতায় সবসময়ই সাধারণ মানুষকেই বেশি মূল্য চুকাতে হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া চাপে তারাই বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

শনিবার সমাবেশের সময় পুলিশ সদস্যসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার হরতালকেন্দ্রিক জ্বালাও পোড়াওয়ে অন্তত তিনজনের প্রাণহানির খবর এসেছে।

এমন পরিস্থিতিতে অবরোধের মত কর্মসূচির পর রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে বিশ্লেষকরাও সংশয়ের কথা বলছেন।

যেমনটি ফুটে উঠেছে দি বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্ক (বিপিএসএন) এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বির আহমেদের কথায়। তিনি বলেন, রাজনীতির যে সাংঘর্ষিক চিত্র তা ২৮ অক্টোবর আরও স্পষ্ট হল। এ সংঘাতময় পরিস্থিতি নির্বাচনকালীন সামনে তিন মাসে অব্যাহত থাকবে।

বিএনপি মহাসচিবকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতি আরও বাড়ছে হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ অধ্যাপকের মতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে অবস্থা তা এক ধরনের সাংঘর্ষিক। কোনো পয়েন্ট অব কন্টাক্ট নেই, দুই পক্ষে কোনো যোগাযোগ নেই; কিছুই নেই। খালি যেটা আছে সেটা হল প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেটা থাকবে নির্বাচন পর্যন্ত।

মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারে রোববার সকাল ১০টা ২২ মিনিটে বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনটা অন্যরকম পরিবেশে হবে বলে মনে হয়। তা হয়ে থাকলে তাহলে এ সংঘাত, অনিশ্চয়তার মধ্যে হবে। আমি আর কোনো কিছু তো দেখি না।

জনমনে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে তা থেকে উত্তরণ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, কারণ, কোনো পক্ষই নিবৃত্ত হবে না। কোনো পক্ষই শান্ত হবে না। তারা এটাকে চূড়ান্ত জয় পরাজয় হিসেবে দেখছে, খেলায় যেমন জয় পরাজয় ঘটে। খেলায় তারা জিতবে, না হয় হারবে।

অধ্যাপক সাব্বির বলেন, হরতাল-অবরোধের চেয়ে সংলাপই ভালো। কিন্তু বাংলাদেশে সে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সংলাপ দিয়ে তো সমাধান হয়নি। 

এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, এখন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই সে কথা আমি বলব না। সেটার একটা ‘আইস ব্রেকিংটা’ একটা জায়গা থেকে হতে হবে। কেউ একজন নরম হতে হবে। সেটা অবশ্যই ক্ষমতাসীন দলে যিনি থাকবেন, যিনি প্রধান তাকেই সেই সৌজন্য প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু সেটা কি করবে? পরিস্থিতি সেটা বলে না। এটা অনেকটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরই নির্ভর করে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের উপর।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। শনিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সহিংসতায় মানুষ মরে গেল এটা খুবই বেদনাদায়ক- মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, দুপক্ষ যদি সমান তালে একগুয়েমি প্রদর্শন করে তাহলে ভোগান্তি তো জনগণকে পোহাতে হবে।

তার মতে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে ‘তৃতীয় পক্ষের সুযোগ নেওয়ার সুযোগ’ তৈরি হবে। সেটা এড়াতে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃত্ব যদি মনে করে সে সুযোগ করে দেওয়া ঠিক হবে না; তাহলে একটা সম্ভাবনা থাকে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’
নির্বাচন পযবেক্ষক ও বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলছেন, এখন পর্যন্ত তার মনে হচ্ছে বিরোধী দল ২০১৪ সালের মতো ঘটনা প্রবাহের দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সহিংসতায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে। দলগুলোর অনড় অবস্থানের কারণে পরিস্থিতি আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সহিংসতা শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, যা অনাকাঙ্খিত।

তিনি বলেন, দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-তারা সহিংসতা চায় না। কিন্তু কোনো ছাড়ও দিচ্ছে না। যার যার অবস্থানে অনড়। দু’পক্ষের অবস্থান, চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে সহিংসতার ঝুঁকি সামনে বেড়েই যাবে। দলগুলো দাবি আদায়ে হয়ত একেক ধরনের কৌশল বেছে নেয়। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে হরতাল, অবরোধ হলে এবং যোগাযোগও বন্ধ হলে এর সার্বিক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবখানে।

এখন সংলাপ সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনায় বসা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

আব্দুল আলীম বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটা সবার। এক জায়গায় বসে মূল্যবোধ বিবেচনা করে এগোলে সমাধান সম্ভব।

সংলাপের আহ্বান ইএমএফ এর
বিবদমান পরিস্থিতির মধ্যে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের পাঁচজনের প্রতিনিধি নিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে মত বিনিময় করেছে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)।

বৈঠক শেষে ইএমএফ এর পরিচালক ও মুখপাত্র আব্দুল জব্বার খান বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখানে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে, সরকারকে সংলাপের মাধ্যমে (দায়িত্ব নিতে হবে)। কারণ, দায়িত্ব সরকারেরই প্রথম। কাজেই সংলাপের জন্য আহ্বান করতে হবে।  সেই সংলাপের মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একত্রিত করে কীভাবে একটি সুন্দর অংশগ্রহণমূলক করা যায় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

রোববার কুমিল্লা চকবাজার এলাকায় পুলিশ সদস্যরা পিকেটারদের লাঠিপেটা করেন। এ সময় পালাতে য়ে কেউ কেউ মাটিতে পড়ে যান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, কার অধীনে হবে তা নিয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোয় মতানৈক্য রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসি ও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ না হওয়ায়ও হতাশা রয়েছে।

ইএমএফ মুখপাত্র বলেন, তাদেরকে দুইবার সংলাপের চেষ্টা করেও ইসি সংলাপে বসতে পারেনি এবং সেই কারণে নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটু হতাশা আছে আমরা যেটি বুঝলাম। তাদের সঙ্গে ইসি যদি সংলাপে বসতে পারতেন। তাহলে হয়তো অনেক সমস্যারই সমাধান হতে পারত।  

‘পুরনো পথেই বিএনপি’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি যে তাদের চিরাচরিত চরিত্রে ফিরে এসেছে এটা সবাই বুঝে গেছে। আমরা আগেই সন্দেহ করেছি, তারা সেই সন্দেহের স্বরূপ শনিবার উন্মোচিত করেছে। রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, খুন করা, গাড়ি পোড়ানো, এগুলো তাদের পুরাতন কর্মকাণ্ডের পুণরাবৃত্তির যাত্রা। তাদের মহাযাত্রা হলো, জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়ে ধ্বংসাত্মক যাত্রা।

তার মতে, এটাও সত্য ২০১৩/১৪ আর বর্তমান বাংলাদেশ এক না, তাদের বর্তমান কূ-কর্মকাণ্ডে বিদেশি অমেরিকান প্রভু থেকে শুরু করে এই দেশে যারা বিভিন্নভাবে সমর্থন দিত, তারাও বিএনপি থেকে শনিবারের কর্মকাণ্ডে মুখ ফিরিয়ে নেবে। পুলিশ হত্যা পুরোপুরি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, এটা বিএনপির চরিত্রের অংশ।

দলের যুগ্ম সাধারণ মাহবুব-উল আলম হানিফের মতে, ২০১৫ সালের সহিংসতার মত হত্যা, খুন, আগুন সন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানো, গাছ পোড়ানো, বাস পোড়ানোই বিএনপির চিরাচিরত চরিত্র। 

শনিবার সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কাকরাইল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তিনি বলেন, ২০১৮ সালেও তারা আগুন সন্ত্রাস করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। সুযোগ পেলেই তারা বাসে আগুন দেয়। শনিবার আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আবারও তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা সন্ত্রাসের পথেই হাঁটছে।


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, বিএনপি ‘সন্ত্রাসের পথ’ বেছে নিয়েছে, অন্ধকারের পথ বেছে নিয়েছে। সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে আসার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানান তিনি।

রোববার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনি বলেন, তারা পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে আর তাদের সঙ্গে সংলাপের প্রয়োজন নেই। আমরা আগ বাড়িয়ে সংলাপের দিকে কোনো কথা বলব না।