ভূমিকম্প | প্রতীকী ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার সন্ধ্যার ভূমিমকম্পসহ গত তিন মাসে দেশে ছয়টি ভূমিকম্প হলো। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই হয়েছে তিনটি। দুটি হয়েছে আগস্ট মাসে। তবে ছয়টি ভূমিকম্পের মধ্যে দুটিরই উৎসস্থল ছিল ডাউকি চ্যুতিতে। বাংলাদেশের মাটির নিচে ভূমিকম্পের দুটি বড় উৎস আছে। তার মধ্যে ডাউকি চ্যুতি একটি। আর এখানে একের পর এক ভূমিকম্প হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই।
ডাউকি চ্যুতিতে ছোট ছোট এসব ভূমিকম্পের ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে।
তবে সোমবার যে ভূমিকম্প হয়েছে, এর উৎপত্তিস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেটি অবশ্য ডাউকি চ্যুতির অংশ নয়। এটি ওল্ডহ্যাম ফল্ট বা চ্যুতির মধ্যে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রিজেলিয়ান্স বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ভূমিকম্পের উৎসস্থল ডাউকি আজকের ভূমিকম্পের উৎস্থল ছিল না। আজকের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ১৮৯৭ সালে মেঘালয়ের সেই বড় ভূমিকম্প যেখানে হয়েছিল, সেখানেই। ১৮৯৭ সালে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৩। এরপর এ অঞ্চলে আর বড় ভূমিকম্প হয়নি।
তবে এবারের উৎসস্থল ডাউকি না হলেও এ অঞ্চলে একের পর এক ভূমিকম্প ভীতি তৈরি করেছে।
ডাউকি ছাড়া দেশের ভূমিকম্পের আরেকটি উৎস হলো সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ভূ-অভ্যন্তরে বিস্তৃত একটি সাবডাকশন অঞ্চল। এটি এমন অঞ্চল, যেখানে একটি ভিত্তিস্তরের (টেকটোনিক প্লেট) নিচে আরেকটি ভিত্তিস্তর তলিয়ে যেতে থাকে। এই অঞ্চলজুড়ে সক্রিয় মূল চ্যুতির অনেকগুলো শাখা রয়েছে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ডাউকি চ্যুতি লম্বায় ৩০০ কিলোমিটার। গবেষণায় দেখা গেছে, এখানে একটি বড় ভূমিকম্পের সঙ্গে আরেকটি ভূমিকম্পের মধ্যকার ব্যবধান প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর। সে অনুযায়ী ডাউকি চ্যুতি হয়তো এখনো আমাদের জন্য হুমকি নয়। যদিও এ নিয়ে মতভেদ আছে।’
ডাউকি চ্যুতিতে একের পর এক ছোট ভূমিকম্প কিসের ইঙ্গিত দেয়? এর দুটো ব্যাখ্যা আছে। একদল বিজ্ঞানী মনে করেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ার অর্থ হলো এই চ্যুতিতে সঞ্চিত বিপুল শক্তি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। তাই বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা কম।
আবার আরেক দল মনে করেন, ছোট ছোট এই ভূমিকম্পের মাধ্যমে আসলে সংশ্লিষ্ট কাছের চ্যুতি (সিস্টার ফল্ট) বা ভাসমান ফাটলরেখা দিয়ে শক্তি চলে যাচ্ছে। মূল ফাটলরেখার শক্তি অটুট থাকছে। তার অর্থ এই নয় যে মূল ফাটলরেখার শক্তি কমে যাচ্ছে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামল বলেন, ‘আমি দ্বিতীয় ধারার বিশেষজ্ঞদের পক্ষে।’
গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনবার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।
এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা।
আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। আগস্টের দুই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ডাউকি চ্যুতির মধ্যে ছিল।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ডাউকি চ্যুতি হলো একটি সক্রিয় ফাটলরেখা। এটি দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। এর দক্ষিণ–পূর্ব প্রান্তে পড়েছে বাংলাদেশ। পশ্চিমে ভারতের মেঘালয় ও আসাম। দেখা গেছে, এই চ্যুতির পশ্চিম প্রান্তেই বড় ভূমিকম্পগুলো হয়েছে এযাবৎ। আর দুটি বড় ভূমিকম্পের মধ্যকার যে সাড়ে ৩০০ বছরের ব্যবধানের হিসাব করা হয়, তা কিন্তু পশ্চিম প্রান্তের বড় ভূমিকম্প ধরেই। আসলে পূর্বে ১৯৫০ সালের পর আর বড় কোনো ভূমিকম্প হয়নি। তখন রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৬।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ডাউকি চ্যুতির দক্ষিণ–পূর্বাংশ বাংলাদেশ বা এর কাছাকাছি এলাকায় বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।