ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের তারের ওপর। বুধবার রাত ১০টায় কক্সবাজারের মহেশখালীর মগডেইল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত করে কিছুটা এগিয়ে দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এখন এটি বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে পারে। হামুনের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছচাপা পড়ে কক্সবাজার জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

 মঙ্গলবার রাত সোয়া একটায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাত একটায় হামুন উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে। এটি দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবস্থান করছে। এটি আরও স্থলভাগের দিকে এগিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হতে পারে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ উপকূল অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০–৮০ কিলোমিটার।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। রাত আটটার দিকে কক্সবাজারে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৪ কিলোমিটার।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ গত সোমবার ঘূর্ণিঝড় ‘হামুনে’ রূপ নেয়। শুরুতে আবহাওয়াবিদেরা বুধবার দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর দ্রুত তা বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোতে থাকে। ফলে তা শক্তি অর্জনের জন্য তেমন সময় পায়নি।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে ৮৭ মিলিমিটার। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বেশির ভাগ উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বয়ে যায়। তবে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল। অর্থাৎ কালবৈশাখীর চেয়ে সামান্য বেশি গতিতে বাতাস বয়ে যায়।

কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেল এলাকায় এ সময় আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ নিম্নাঞ্চল জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতের আশঙ্কায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সব নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

এর আগে একই কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১০ জেলার ১৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার নির্দেশ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। জেলাগুলো হলো পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর। মঙ্গলবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

কক্সবাজারে দুজনের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে কক্সবাজার জেলায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী এলাকায় মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে সেমি পাকা ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে আবদুল খালেক (৪০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী রাত ১১টায়  এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ ছাড়া মহেশখালী উপজেলার গোরস্তান এলাকায় রাত সাড়ে আটটার দিকে ঘরের সামনে গাছ চাপা পড়ে মারা যান হারাধন দে (৪৫) নামের আরেক ব্যক্তি। মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, গাছ চাপা পড়ে হারাধন দে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া গাছ চাপা পড়ে আহত ছয়জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।