রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি চায়ের আড্ডায় মেতেছেন। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ঘিরে ক্যাম্পাসের ‘অস্থিতিশীল’ পরিবেশ নানা নাটকীয়তার পর মেয়রের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক হয়েছে। নতুন কমিটির নেতারা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরে রাতে নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রথম কর্মসূচির কথা জানান। এতে ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতা–কর্মীদের নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।
তবে ‘কাঙ্ক্ষিত’ পদ না পেয়ে পদবঞ্চিত সিনিয়র নেতারা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের একটি সূত্র।
গতকাল রাতে ফেসবুকে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি-সম্পাদক তাঁদের পোস্টে লিখেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত কমিটির পক্ষ থেকে আগামীকাল (আজ বুধবার) সকাল ১০টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও শহীদ ড.শামসুজ্জোহা স্যারের সমাধিতে ও শহীদ ফারুক হোসেন ভাইয়ের স্মৃতিফলকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে।’
কর্মসূচিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত কমিটির সব নেতা, সব হল ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সব অনুষদ ও বিভাগ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সব নেতা-কর্মীকে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
তবে সকাল সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটে ছাত্রলীগের কোনো নেতা–কর্মীকে দেখা যায়নি। নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের সব ইউনিটের নেতা–কর্মীকে এই কর্মসূচিতে থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি সবার উপস্থিতিতে কর্মসূচি সফল হবে।’
‘কাঙ্ক্ষিত’ পদ না পেয়ে গত তিন দিন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম। কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কর্মসূচির বিষয়টি আমাদের সবাইকে জানানো হয়েছে। আমি কিছুটা অসুস্থ, থাকতে পারব না। তবে বাকি সবাই অংশ নেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে ১৯৯৬ সাল থেকে চায়ের ব্যবসা করেন এনামুল হক। তিনি আলাপে আলাপে বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি গত তিন দিন উত্তপ্ত ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় বিষয়টির সুরাহা হয়ে গেছে। আজকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর পর গত শনিবার রাতে মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরদিন থেকে কমিটিকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করে আসছিল ছাত্রলীগের কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া একটি অংশ। গত তিন দিন তাঁরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন, ভাঙচুর, মারধর ও কয়েক দফায় ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটান। এমনকি নতুন কমিটির নেতা-কর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। গতকাল বিকেলে তাঁরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক ও কাজলা গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিষয়টির সমাধানে সন্ধ্যায় নগর ভবনে দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
বৈঠকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে সাবেক সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম ও তাওহীদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ, ছাত্রলীগ নেতা অনীক মাহমুদ, সাকিবুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও বৈঠকে অংশ নেন। সভা শেষে নতুন কমিটির নেতারা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে একটি শোভাযাত্রা বের করেন।
এক বছরের জন্য ঘোষিত আংশিক কমিটিতে ২০ জনকে সহসভাপতি করা হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছেন আটজন। সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ৯ জন। তাঁদের মধ্যে অন্তত চারজনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে অন্তত সাতজনের বিরুদ্ধে।
কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা পরদিন থেকেই কমিটি বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছিলেন। গতকাল রাজশাহী সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির ‘সমাধান’ হয়। বৈঠকের পর নতুন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।