সহকর্মীদের ফেসবুকে গালি, ফের তদন্তের মুখে রামেকের ওয়ার্ডমাস্টার

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার রাসেল আলীর বিরুদ্ধে এবার সহকর্মীদের আপত্তিকর ভাষায় গালি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের ১৬৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১৫১ জনের স্বাক্ষরকৃত একটি লিখিত অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়, তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও শুধু সতর্ক করা ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি না দেওয়ায় রাসেল আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি ফেসবুকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির সকল কর্মচারীকে আপত্তিকর ভাষায় গালি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

গত ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির রামেক হাসপাতাল ইউনিটের সভাপতি মোজাহার আলী ও সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম হাসপাতালের পরিচালকের কাছে আবার লিখিত অভিযোগ করেছেন ওয়ার্ড মাস্টার রাসেলের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে হাসপাতালের ১৬৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মধ্যে ১৫১ জন স্বাক্ষর করেন।

ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী ফেসবুক পোস্টে গালি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতালে চাকরি করতে আসার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত চলছে। এরা আমাকে চাকরি করতে দিতে চায় না। দুই-আড়াই বছর ধরে আমি হয়রানির শিকার হচ্ছি। এসব নিয়ে কি আমি কিছু লিখতে পারি না?’

তবে আগের তদন্ত কমিটি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল কোনো সদুত্তর দেননি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘রাসেলের বিরুদ্ধে আসা নতুন অভিযোগটি তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্ত কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এর আগে হাসপাতালের কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসিক ও সাপ্তাহিক চাঁদা তোলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে রাসেলের বিরুদ্ধে। তিনি চাকরি দেওয়ার নামে অনেকের কাছ থেকেই মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। টাকা নিয়ে তিনি একবার অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করলেও পরে আরও বেশি টাকা নিয়ে আগের কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করেন। এরপর যাদের কাছ থেকে বেশি টাকা পান, তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেন।

ভুক্তভোগীরা এই রাসেলের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন সময় হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন। পরে ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আমলে ওই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ আসার পরে ওই তদন্ত শেষ হয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

তদন্ত কমিটি রাসেলসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর গত ২৩ আগস্ট সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. আবু তালেব এক অফিস আদেশে মনা কুমার রায় ও রাকিবুল ইসলাম নামে আউটসোর্সিংয়ের দুই কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেন। একই আদেশে ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল আলী ও অফিস সহায়ক রাজিবুল ইসলামকে প্রথমবারের মতো সতর্ক করা হয়। চাকরি বহিতে বিষয়টি লিপিবদ্ধ করে রাখা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।