পুলিশের গুলিতে শিশু আহত হওয়ার খবরে উত্তেজিত এলাকাবাসী বগুড়া–রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আজ সকালে বগুড়ার সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পিকেটিং করার সময় হরতাল-সমর্থকদের সরিয়ে দিতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিরুদ্ধে। এ সময় এক শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শত শত গ্রামবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন।

পুলিশ পাল্টা শটগানের গুলি ছুড়লে উভয় পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আরও অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোকুল খোলারঘর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ও আহত ব্যক্তিরা হলো গোকুল খোলারঘর এলাকার ধলু মিয়ার ১০ বছরের শিশু মাহি, শিক্ষার্থী নয়ন, রাজু, আওলাদ ও গফুর। এ ছাড়া সাব্বির আহমেদ সাকিল নামের স্থানীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিকও ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য অবস্থান নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার ভোর থেকেই গোকুল খোলারঘর এলাকায় মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পিকেটিং করছিলেন হরতাল-সমর্থকেরা। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে র‍্যাবের একটি টহল দল এসে পিকেটারদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতেও হরতাল-সমর্থকেরা মহাসড়কে অবস্থান না ছাড়লে সকাল ১০টার দিকে বগুড়া থেকে ডিবির একটি টহল দল সেখানে গিয়ে শটগানের গুলি ছোড়ে। এ সময় শিশুটি আহত হয়। শিশুটির গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে গোকুল খোলারঘর জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে শত শত নারী-পুরুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় গ্রামবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়ে।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাফতুন আহমেদ খান অভিযোগ করেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে প্রথমে ১০ বছরের শিশুর ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে। এরপর গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে। সেখানকার পরিস্থিতি এখন থমথমে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, রোববারের হরতালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষ সমর্থন জানিয়েছেন। শহরে বিএনপির সমাবেশ চলাকালে সরকারি দলের গুন্ডারা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হাতবোমা হামলা ও গুলি চালিয়েছে। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। হরতালের আগে কারণ ছাড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গোকুলে সকাল থেকে গ্রামবাসীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মহাসড়কে পিকেটিং করছিলেন। পুলিশ বিনা উসকানিতে গ্রামবাসীদের ওপর দফায় দফায় গুলিবর্ষণ করেছে।

জানতে চাইলে বগুড়া ডিবির পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসানকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার গোকুলে টহল দলকে পাঠানো হয়েছিল, তারা কী পরিস্থিতিতে কত রাউন্ড গুলি ছুড়েছে, তা জানা নেই। পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ধরেননি।