১৪টি গরু হারিয়ে দিশেহারা আলম খলিফা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: দিনমজুর আলম খলিফার (৩৬) পরিবারে আছেন বৃদ্ধ মা, তিন মেয়ে ও স্ত্রী। ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আনতে ঋণ করে গরু-বাছুর কিনে লালন–পালন করা শুরু করেন। কিন্তু সেটাও হলো না। গত আট বছরে চারবারে তাঁর গোয়াল থেকে ১৪টি গরু চুরি হয়েছে।

সর্বশেষ শনিবার ভোরে তাঁর গোয়ালের তালা ভেঙে তিনটি গরু চুরি হয়েছে। এখন তিনি ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তিনি চুরি যাওয়া গরুর সন্ধান পেতে পুলিশের আশ্রয় নিয়েছেন।

আলম খলিফা নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কুমরুল পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত হাবিবুল্লাহ খলিফার ছেলে। পেশায় কৃষিশ্রমিক। তবে সুযোগ পেলে টিনের ঘর তৈরির কাজও করেন। তাঁর তিন মেয়ে। বড় মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ও মেজ মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। ছোট মেয়ে কেবল হাঁটা শিখেছে।

আলম খলিফা বলেন, দিনমজুরি করে প্রতিদিন যা আয় করেন তা চাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। বাড়ির ভিটা ছাড়া জমি নেই। মেয়ে তিনটি বড় হয়ে উঠছে। মায়ের ওষুধ কিনতে হয়। এসব কথা ভেবে ৯ বছর আগে ঋণ নিয়ে গরু কিনে লালন-পালন শুরু করেন। সারা দিন তাঁর বৃদ্ধ মা গরুগুলোর যত্ন নিতেন।

প্রথমবার আট বছর আগে দুটি গাভি, একটি বকনা ও একটি এঁড়ে গরু চুরি হয়। এর দুই বছর পর আবার চারটি গরু চুরি হয়। পরেরবার দুটি গাভি ও একটি বকনা গরু চুরি হয়। সর্বশেষ আজ ভোরে গোয়ালঘর থেকে দুটি গাভি ও একটি বকনা গরু চুরি হয়। আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে গাভি দুটির বাচ্চা হওয়ার কথা ছিল। বিক্রি করলে অন্তত চার লাখ টাকা পাওয়া যেত বলে তিনি জানান।

কীভাবে বারবার গরু চুরি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়ির মধ্যেই গরুর গোয়ালঘর। আগের তিনবার গোয়ালঘর কাঁচা ছিল। বেড়া কেটে চোর ঢুকে গরু চুরি করেছিল। পরে ধারদেনা করে ইটের দেয়াল দিয়ে গোয়ালঘর করেছিলেন। এবার ঘরের দরজার তালা ভেঙে গরু নিয়ে গেছে।

আলম খলিফার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩২) বলেন, ‘ধারদেনা করে গরু কিনে যখনই দেখার মতো হয়, তখন চুরি হয়। এভাবে আমাদের সব শেষ হয়া গেছে। এখন তিন লাখ টাকার ধারদেনা কীভাবে পরিশোধ করব তা–ই ভাবছি।’

বৃদ্ধ মা ফাতেমা বেওয়া বলেন, ‘ওর (আলমের) সংসারের সুখের জন্য কষ্ট করে হলেও সারা দিন গরু নিয়ে মাঠে ঘুরি। তিনবার চুরির পর আমার ছেলে আর গরু পালতে চাচ্ছিল না। আমি জোর করে আবার গরু কিনায়ছিলাম। এখন আমার ছেলেটা কী করবে তা ভেবেও পাচ্ছি না।’

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আলম খলিফা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চুরি হওয়া গরু উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে চোর শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এর আগের গরু চুরির ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে ওসি বলেন, আগেরবারের চুরির বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই।