নিজস্ব প্রতিবেদক: এত দিনের ‘অহিংস’ অবস্থান বজায় রেখেই আজ ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশও ‘শান্তিপূর্ণ’ করতে চায় বিএনপি। নেতা-কর্মীদের সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই মহাসমাবেশ থেকে সরকার হটানোর এক দফার আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মহাসমাবেশে হামলা বা সহিংসতা হলে পরদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সর্বোচ্চ জমায়েত করা। শুধু দলীয় নেতা-কর্মী বা সমর্থক নয়, নীতিনির্ধারকদের লক্ষ্য এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষেরও বড় ধরনের অংশগ্রহণ। মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলে এক বা দুই দিনের বিরতি দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ জন্য দুটি কর্মসূচি বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ‘নির্বাচন কমিশন’ ও ‘সচিবালয়’ অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ বা ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। তবে আজ উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে কর্মসূচি রদবদল হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে আজ বেলা দুইটা থেকে মহাসমাবেশ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি। যদিও গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকেই কয়েক হাজার উৎসুক নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এই মহাসমাবেশকে ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উৎসাহ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, আজ বেলা ১১টা থেকে মহাসমাবেশের অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। মহাসমাবেশে কে কোথায় বসবেন, সেটিও ঠিক করে দিয়েছে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। এর মধ্যে মঞ্চের সামনে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। মঞ্চের ডানে যুবদল ও মহিলা দল, বাঁয়ে স্বেচ্ছাসেবক দল। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে পল্টনের সিটি হার্ট মার্কেটের সামনে থেকে ফকিরাপুল এলাকা, মহানগর উত্তর বিএনপিকে রাজমণি ঈসা খাঁ হোটেলের সামনে থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতিবারই রাজধানীতে বড় কর্মসূচি ঘোষণার পর স্থানের অনুমতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গতকাল রাত সাড়ে আটটার পর বিএনপিকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরপর তারা মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে। যদিও বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হয়। এরপর পুলিশ মঞ্চ তৈরি করতে নিষেধ করলে তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়।
বিএনপির নেতারা বলছেন, দলের মহাসমাবেশ নয়াপল্টনে, নাকি অন্য কোথাও—এ নিয়ে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছিল। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি নিয়ে টানা কয়েক দিন ধরে বিতর্ক ও অনিশ্চয়তা চলে। একপর্যায়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েক শ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেষে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি। কিন্তু এবার দলটি নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। ডিএমপি থেকে চিঠি দিয়ে নয়াপল্টনের বাইরে বিকল্প জায়গার নাম দিতে বললেও বিএনপি দেয়নি। নেতারা মনে করেন, এই মুহূর্তে তাঁরা সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ প্রান্তে আছেন। এই সময়ে এসে সমাবেশের অনুমতি, স্থান নিয়ে নমনীয়তা দেখানোর আর সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতির বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনের আক্রমণাত্মক অবস্থান থেকে পিছু হটা বলে মনে করছেন নেতারা।
মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীর মূল প্রবেশপথগুলোতে গতকাল দুপুরের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যানবাহনে তল্লাশি জোরদার করেছে। আগের মতোই গ্রেপ্তার, তল্লাশিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে ঢাকায় আসেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কথা বলে জানা গেছে, এবার বিএনপির নেতা-কর্মীরা নতুন কৌশলে ঢাকায় আসেন। অন্যান্য সময় পুলিশ নেতা-কর্মীদের মুঠোফোন অনুসরণ করে ধরপাকড় করত। অথবা স্মার্টফোন তল্লাশি করে বিএনপির কর্মী বলে চিহ্নিত করে আটক করা হতো। সে জন্য এবার বেশির ভাগ নেতা-কর্মী স্মার্টফোন নিয়ে আসেননি। অনেকে পুরোনো ফিচার ফোন ব্যবহার করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে বাস-লঞ্চের চলাচল বন্ধ করা, যানবাহনে তল্লাশি-গ্রেপ্তার করা, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া—সবকিছুর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপির মহাসমাবেশে লোকসমাগম কমানো। আমরা মনে করি, সরকারের কোনো অপকৌশলই আর কাজে লাগবে না।’