নাচে-গানে মুখরিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক উৎসব

নওগাঁর নিয়ামতপুরে বুধবার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে লোকজ গান ও নাচের উৎসব হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নওগাঁ: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী লোকজ গান ও নাচের মধ্য দিয়ে নওগাঁর নিয়ামতপুরে হয়ে গেল লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসব ও মিলনমেলা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বুধবার উপজেলার শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বারোয়ারি দুর্গামন্দির কমিটির আয়োজনে এই উৎসব হয়। অনুষ্ঠান বেলা ৩টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩৫টি সাংস্কৃতিক দল গান ও নাচ পরিবেশন করে। ঢোল, মাদল আর মন্দিরার তালে তালে তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য তুলে ধরে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে স্কুল মাঠে উৎসব উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি শুরু হয়। তবে মূল আয়োজনের শুরু বিকেলে। পায়ে আলতা, খোঁপায় বাহারি ফুল, লাল-হলুদ শাড়ি পরা নারীরা নাচ ও গানে মুখরিত করে তোলেন চারপাশ। তাঁদের সঙ্গে ঢোল-মাদল বাজিয়ে অংশ নেন পুরুষেরাও। সমতল ভূমির ওঁরাও, মুন্ডা, সাঁওতাল, মাহাতো, হাঁড়িসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরেন এই উৎসবে।

অনুষ্ঠান দেখতে আসা নরেন পাহান বলেন, ‘এসে খুব ভালো লাগল। কারণ এসব নাচ-গান আমাদের ঐতিহ্য। হাজার হাজার মানুষ এসেছে এই উৎসব দেখতে। এখানে শুধু আদিবাসীরাই নয়, হিন্দু-মুসলিম সবাই এসেছে।’

অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৩৫টি সাংস্কৃতিক দল গান ও নাচ পরিবেশন করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নাচে অংশ নেওয়া রুবিনা সরেন বলেন, ‘প্রতিবছর দুর্গাপূজার পরদিন শিবপুর স্কুল মাঠ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি। আমি ১২ জনের একটি দল নিয়ে নাচে অংশ নিয়েছি।’

আয়োজকেরা জানান, প্রতিবছর দুর্গোৎসবে দশমীর পরদিন এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। নওগাঁ ছাড়াও এই উৎসবে যোগ দিতে পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকজন এখানে সমবেত হন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গান ও নাচ উপভোগ করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। অনুষ্ঠানে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হকসহ অন্যরা।

এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সংস্কৃতির বিকাশ কুসংস্কার ভেঙে আলোর পথ দেখায়। সম্প্রীতির বন্ধন শক্ত করে। এ কারণে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষ্টি-কালচার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার।

পরে খাদ্যমন্ত্রী এই উৎসবে অংশ নেওয়া শিল্পীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে টেলিভিশন ও নৃত্যসামগ্রী তুলে দেন।