হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন সাকিব |  এএফপি

খেলা ডেস্ক: নতুন দিন, নতুন আশায় বুক বাঁধা, একাদশে বদল। পরিবর্তন হয় আরও অনেক কিছু। কিন্তু একটি জায়গা অপরিবর্তিত ম্যাচের পর ম্যাচ- বাংলাদেশের ব্যাটিং! আবারও বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে পাকিস্তানের বিপক্ষেও লড়াই জমাতে পারল না সাকিব আল হাসানের দল। ফের সঙ্গী হলো হারের বিষাদ।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার ৭ উইকেটে।

পাকিস্তানি পেসারদের তোপে পড়ে ২৯ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২০৪ রানে। জবাবে আবদুল্লাহ শাফিক ও ফাখার জামানের ফিফটিতে ১০৫ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাবর আজমের দল।

বড় জয়ে বিশ্বকাপে টানা চার হারের বৃত্ত ভাঙল পাকিস্তান। বাংলাদেশ বন্দী রইল হারের বৃত্তেই। জয়ে আসর শুরুর পর হেরে গেল টানা ছয় ম্যাচে।

সেমি-ফাইনালের আশা গুঁড়িয়ে গেছে আগেই, এই হারে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ চারের লড়াই থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। এখন সেরা আটে থেকে আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট পাওয়াই দুষ্কর।

ম্যাচে বাংলাদেশের দলীয় স্কোরেই ফুটে উঠছে ব্যাটসম্যানদের খতিয়ান। আসরে যার ব্যাটে যা একটু আশার ঝিলিক, সেই মাহমুদউল্লাহই কেবল ছুঁতে পারেন পঞ্চাশ।

পাকিস্তানের তিন পেসার মিলে ভাগ করে নেন ৮ উইকেট। ২৩ রানে ৩ শিকার ধরেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৩১ রানে শেষের ৩ উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। হারিস রউফের প্রাপ্তি ২টি।

তবে পাঁচ ম্যাচ পর একাদশে ফিরে ৭৪ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ফাখার। তার ইনিংস গড়া ৭ ছক্কা ও ৩ চারে।

বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে এক ইনিংসে তার চেয়ে বেশি ছক্কা আছে কেবল একজনের। ২০০৭ আসরে কিংসটনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ ছক্কা মেরেছিলেন ইমরান নাজির।

শেষের মতো বাংলাদেশের ম্যাচের শুরুটাও ছিল হতাশাময়। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানেই হারায় তানজিদ হাসানকে। বাঁহাতি ওপেনারকে এলবিডব্লিউ করে পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম একশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন আফ্রিদি। বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারে আলগা শটে আউট হয়ে বিশ্বকাপে নিজের বিবর্ণ পথচলা দীর্ঘায়িত করেন নাজমুল হোসেন শান্ত।   

জোড়া ধাক্কা সামলে উঠবে কী, মুশফিকুর রহিমের দ্রুত বিদায়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৩ উইকেটে ২৩।

প্রমোশন দিয়ে এ দিন পাঁচে নামানো হয় মাহমুদউল্লাহকে। দলের বিপদে আরও একবার ঢাল ধরে দাঁড়িয়ে যান তিনি। এক প্রান্ত আঁকড়ে থাকা লিটন কুমার দাসের সঙ্গে গড়েন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৭৯ রানের জুটি।

বাজে এক শটে ফিফটি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন লিটন। তার ৬৪ বলের ইনিংস গড়া ৬টি চারে। ৫৮ বলে ফিফটির পর বেশিক্ষণ টেকেননি মাহমুদউল্লাহ। আফ্রিদির দারুণ ডেলিভারিতে শেষ হয় তার ৭০ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় গড়া ৫৬ রানের ইনিংস।

দুই ম্যাচ পর ফেরা তাওহিদ হৃদয় বিদায় নেন একটি ছক্কা মেরেই। সাকিব শুরু থেকে রানের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। ইফতিখার আহমেদকে টানা তিনটি চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন তিনি। কিন্তু আরও একবার ফেরেন শর্ট বলে (৬৪ বলে ৪৩)। ভাঙে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে তার ৪৫ রানের জুটি।

এরপর মিরাজের ২৫ রানের সুবাদে কোনোমতে দুইশ ছাড়াতে পারে বাংলাদেশ।

অল্প পুঁজি নিয়ে শুরুতে আঁটসাঁট বোলিংয়ে পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে বেঁধে রাখেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারের দুটিই হয় মেডেন।

এরপর লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে পারেননি বোলাররা। তা কাজে লাগিয়ে শতরানের জুটিতে পাকিস্তানকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ফাখার ও শাফিক। বড় বড় সব ছক্কায় বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন ফাখার।

শাফিককে (৬৯ বলে ৬৮) ফিরিয়ে ১২৮ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন মিরাজ। এরপর তিনি বেশিক্ষণ টিকতে দেননি বাবরকে। ফাখার ছুটছিলেন শতকের দিকে। কিন্তু মিরাজকে স্লগ সুইপ করে ক্যাচ তুলে আক্ষেপ নিয়ে ফেরেন তিনি। বাকিটা অনায়াসে সারেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার।

আসরে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচের প্রথমটিতে আগামী সোমবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৫.১ ওভারে ২০৪ (তানজিদ ০, লিটন ৪৫, শান্ত ৪, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ৫৬, সাকিব ৪৩, হৃদয় ৭, মিরাজ ২৫, তাসকিন ৬, মুস্তাফিজ ৩, শরিফুল ১*; আফ্রিদি ৯-১-২৩-৩, ইফতিখার ১০-০-৪৪-১, রউফ ৮-০-৩৬-২, ওয়াসিম ৮.১-১-৩১-৩, উসামা ১০-০-৬৬-১)

পাকিস্তান: ৩২.৩ ওভারে ২০৫/৩ (শাফিক ৬৮, ফাখার ৮১, বাবর ৯, রিজওয়ান ২৬*, ইফতিখার ১৭*; তাসকিন ৬-০-৩৬-০, শরিফুল ৪-১-২৫-০, মিরাজ ৯-০-৬০-৩, মুস্তাফিজ ৭-০-৪৭-০, সাকিব ৫.৩-০-৩০-০, শান্ত ১-০-৫-০)

ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফাখার জামান