ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাসস, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বৈশ্বিক মান বজায় রেখে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চায়। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আমি একটা কথাই বলতে চাই যে আমরা আমাদের দেশকে সারা বিশ্বের কাছে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’ দেশের চলমান উন্নয়ন যাতে কখনোই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলার জন্যও তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি (মরণোত্তর) প্রদানের জন্য আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র মাঠে এই ‘বিশেষ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যারা আজকের প্রজন্ম, তাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ২০০৯ সালে থেকে আমরা সরকারে। এই ১৫ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ হচ্ছে আজকের এই বাংলাদেশ। সেটা আমরা করতে পেরেছি জাতির পিতার প্রতিটি কথা, প্রতিটি বাণী হৃদয়ে ধারণ করে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমার এটাই আহ্বান থাকবে যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার যতটুকু করার আমি করে যাচ্ছি। কিন্তু এরপর যেন বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা থেমে না যায়।’
গবেষণার ওপর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আরও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই, গবেষণা যেন হয়। গবেষণার ওপর যেন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কৃষি গবেষণায় আমরা খুব সাফল্য অর্জন করেছি। আজ আমরা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সেই সঙ্গে আমাদের বিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান থেকে শুরু করে আমরা তো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, দ্বিতীয়টাও আমরা করব। এরপর তো আমাদের চাঁদে যেতে হবে। সেই চাঁদে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আমি কিন্তু লালমনিরহাটে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিয়েছি।’
বঙ্গবন্ধুকে ডক্টর অব ল প্রদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকার সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি আদায় করতে গিয়ে বহিষ্কৃত হওয়া বঙ্গবন্ধু মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখেননি। কারণ, তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি।
জাতির পিতার সেই বহিষ্কারাদেশ ২০১০ সালের ১৪ আগস্ট প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এবং সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককেও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে একাডেমিক কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি প্রদানের ঘোষণা দেন এবং জাতির পিতার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ডিগ্রি তুলে দেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতার পক্ষে স্বাক্ষর করে ডিগ্রি গ্রহণ করেন। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল ডিগ্রি প্রদানের সাইটেশন পাঠ করেন।
উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক উপাচার্য ও আমন্ত্রিত দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ প্রদানের দিনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকতে পারায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হিসেবে বিশেষ সম্মানের একটি বিশেষ দিন, যেদিন আপনারা আমাকেও ভাষণ দিতে ডেকেছেন।’