বগুড়ার অন্যতম সবজির মোকাম মহাস্থানহাট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: প্রতিবছর অক্টোবরের শুরু থেকেই বগুড়ার বাজার শীতকালীন আগাম সবজিতে ভরে ওঠে। তবে সবজির উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় এবার শীতকালীন সবজির তেমন দেখা মিলছে না। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিমের মতো কিছু সবজি বাজারে উঠলেও দাম আকাশছোঁয়া। কয়েক দফা বৃষ্টিতে চাষে বিলম্ব হওয়ায় সবরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এবার ৭ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ ছাড়া জেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের প্রস্তুতি চলছে।

শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, গাবতলী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর কৃষকেরা অক্টোবরে পুরোদমে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবারও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে শীতকালীন আগাম সবজির চাষের প্রস্ততি ছিল কৃষকের। কিন্ত ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি, বিশেষ করে মুলা, শিম, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ইত্যাদি চাষাবাদ ব্যহত হয়েছে।

শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর গ্রামের কৃষক রইচ উদ্দিন বলেন, অন্যবার এ সময় খেতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, গাজর, মুলাসহ হরেক রকম শীতকালীন সবজি শোভা পেতো। এবার শীতকালীন সবজি খুব কম জমিতে চাষ হয়েছে। শাহনগর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে তিনি মুলা ও ফুলকপির চাষ করেছেন। এখনো খেত থেকে সবজি তোলা শুরুই হয়নি।

চুপিনগর গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, গতবার ৮০ শতক জমিতে শীতকালীন আগাম শিম চাষ করেছিলেন। এবার বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি থাকায় বিঘাখানেক জমিতে শিম চাষ করেছেন। তবে এখনো খেত থেকে এক মণ শিমও বিক্রি করতে পারেননি।

এদিকে শীতকালীন আগাম সবজিচাষ ব্যহত হওয়ায় পাইকারি মোকাম মহাস্থান হাটে সবজির সরবরাহ কম। এতে পাইকারি পর্যায়ে সব ধরনের সবজির দাম আকাশছোঁয়া বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মহাস্থান হাটে গতকাল সোমবার বেগুন বিক্রি করতে আসা কৃষক মেহেরুল ইসলাম বলেন, চার দিন আগে পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। সোমবার সেই বেগুন পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়।

সোমবার মহাস্থান হাটে পাইকারিতে প্রতি কেজি শিম ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এ দাম ১৮০ টাকা কেজি। আর ছোট আকারের বাঁধাকপি ও ফুলকপি গড়ে প্রতিটি গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পাইকারিতে প্রতি কেজি মুলা ৩৫ টাকা, বেগুন ৬০, কচুমুখি ৬০, করলা ৬৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, পটোল ৫০, ঢ্যাঁড়স ৪৫, দেশি আলু প্রতি কেজি ৫৫, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০, চালকুমড়া প্রতিটি ৩৫ টাকা, লালশাক, পালংশাক ও ডাঁটাশাক গড়ে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে খুচরা পর্যায়ে মুলা ৮০ টাকা কেজি, বেগুন ১২০ টাকায় কেজি বিক্রি হয়েছে। অধিকাংশ সবজির দাম মহাস্থান হাটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী মাসের মধ্যে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম কিছুটা কমতে পারে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, এবার সবজি ও আলুর বাজার চাঙা থাকলেও বৃষ্টি বিড়ম্বনায় শীতকালীন আগাম সবজি ও আলু চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এখনো জমির আমন ধান খেতেই রয়েছে। বৃষ্টিতে খেতে জমে থাকা পানিতে আমন কাটাও বিলম্বিত হচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যে আমন মাড়াইয়ের উৎসব পুরোদমে শুরু হবে। নভেম্বর মাসের মধ্যে শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর হয়ে উঠবে।