চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি নয়াদিল্লি: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের উপস্থিতি ঘিরে সংশয় দেখা দিয়েছে। ওই সম্মেলনে তিনি না–ও যোগ দিতে পারেন। বৃহস্পতিবার এমনই এক খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তাতে বলা হয়েছে, সির বদলে সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। অবশ্য সরকারিভাবে চীন ও ভারত এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।

দিল্লিতে আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন সফল করতে ভারতের চেষ্টার অন্ত নেই। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন আগে রাশিয়া জানিয়ে দেয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না। তাঁর বদলে দিল্লি যাবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ওই খবর পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

এবার রয়টার্সের খবরে সি চিন পিংয়ের আসা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হলো। চীনে অবস্থিত এক ভারতীয় কূটনীতিবিদ ও অন্য এক দেশের কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, প্রেসিডেন্টের বদলে ভারতে আসতে পারেন চীনের প্রধানমন্ত্রী।

সি চিন পিংয়ের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বৃহস্পতিবার বলেছেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। যদিও মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের মতে, এই বিষয়ে বেইজিং নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানায়নি।

মাত্র কয়েক দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গে ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলনে সি চিন পিং যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর কিছুক্ষণ কথাও হয়। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়েছিলেন, ওই বৈঠকে পূর্ব লাদাখের সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলতে দুই নেতা সম্মত হয়েছেন।

সেই আলোচনা চীন না ভারত, কার তাগিদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে পরে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক বাধে। এর চার দিন পর গত মঙ্গলবার চীনের পক্ষে থেকে এক নতুন মানচিত্র প্রকাশ করা হয়। তাতে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আকসাই চীনকে সে দেশের অংশ দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে পারস্পরিক চাপান–উতোরও অব্যাহত। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ওই মানচিত্র নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে।

নতুন মানচিত্র প্রকাশের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে নানা জল্পনা চলছে। জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনের ঠিক আগে ওই মানচিত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে চীন কী বার্তা দিতে চাইছে, শুরু হয় সেই বিশ্লেষণ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর চীনের বর্তমান অবস্থান যে অপরিবর্তনীয়, তেমন বার্তা দিতে এই মানচিত্র প্রকাশ কি না, সেই প্রশ্নটিও বড় হয়ে ওঠে। এমনও মনে করা হচ্ছিল, হয়তো সি চিন পিং ভারতে না আসার একটা কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন সেই জল্পনা ও সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিল।

জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই হতে চলেছে তাঁর প্রথম ভারত সফর। গত বছর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এই সম্মেলনে বাইডেন ও সি মুখোমুখি হয়েছিলেন। ভারতে তাঁদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হতে পারত। বালিতে সির সঙ্গে মোদিরও বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের কথা ভারত অনেক দিন প্রকাশ করেনি। চীনই তা প্রকাশ্যে আনে কিছুদিন আগে।

২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে ভারত–চীন সংঘর্ষের পর থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি অশান্ত। ভারতের অনেক ভূখণ্ড চীন দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে ভারত এখনো সফল হয়নি। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এর একটা প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় মোদি চাইছেন ভোটের আগে দ্রুত সম্মানজনক মীমাংসায় পৌঁছাতে। জোহানেসবার্গে সেই চেষ্টাই তিনি করেছিলেন। ভেবেছিলেন, দিল্লিতেও সির সঙ্গে আলোচনা করে একটা মীমাংসায় পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন।

দিল্লি সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নরেন্দ্র মোদিকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসেবে জাহির করার একটা প্রচেষ্টা ভারতের শাসক দল বিজেপির মধ্যে শুরু থেকেই কাজ করছে। রাশিয়া ও চীনের দুই শীর্ষ নেতা গরহাজির থাকলে সেই প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবেই কিছুটা ধাক্কা খাবে।