রাজশাহী ডাক বিভাগের একটি পোস্ট অফিস | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আব্দুল কাদের নাহিদ, রাজশাহী: আজ ১ সেপ্টেম্বর। দিনটি আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস হিসেবে স্বীকৃত। চিঠি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এক সময় তুমুল জনপ্রিয় এই ডাক বিভাগে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। তবে ডাক বিভাগে দিন দিন কমছে চিঠি আদান-প্রদান।
গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি আদান-প্রদান কমেছে অর্ধেক। শুধুমাত্র সরকারি কাজে ও দাপ্তরিক চিঠি ছাড়া ডাক বিভাগে আর তেমন ব্যক্তিগত চিঠি আসে না। তবে সেবার কারণে এখন চিঠি আদান-প্রদান বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
রাজশাহী ডাক বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে উত্তর অঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল আদান-প্রদান হয়েছে ৪ লাখ ২৭ হাজার ৭৩৬টি। এসব থেকে ডাক বিভাগের আয় হয়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ১২৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি এসেছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৬টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি এসেছে ৬৯৫টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৪টি। বিদেশ থেকে এসেছে ২২৩টি। পার্সেল এসেছে ৮ হাজার ৪০৫টি। বিদেশ থেকে এসেছে ২টি। জিইপি হয়েছে ৪ লাখ ৬ হাজার ২১টি ও ইএমএস হয়েছে ১৬০টি।
চলতি বছরের ২০২৩ সালের জালাই মাসে উত্তর অঞ্চলের চিঠি ও অন্যান্য পার্সেল হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫টি। এসব থেকে আয় হয়েছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ১৪৬ টাকা। এর মধ্যে সাধারণ চিঠি এসেছে ৯৯ হাজার ২৪৯টি। বিদেশে থেকে সাধারণ চিঠি এসেছে ৪০টি। রেজিস্ট্রি চিঠি হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৫০টি। বিদেশ থেকে এসেছে ৩৯টি। পার্সেল এসেছে ৩ হাজার ৮৯৩টি। বিদেশ থেকে এসেছে ৬টি। জিইপি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮১টি ও ইএমএস হয়েছে ২৬২টি।
গত ৫ বছরে ডাক বিভাগের চিঠি কমেছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯০১টি। আয় কমেছে ৯ লাখ ৯৮০ টাকা।
এদিকে দিন দিন বাড়ছে রাজশাহী বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর চাহিদা। রাজশাহীতে প্রতিটি কুরিয়ার সার্ভিসেই এখন বাড়তি চাপ। বিশেষ করে আমের মৌসুমে এসব কুরিয়ার সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিল লিমিটেড রাজশাহী অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, রাজশাহীতে অঞ্চলের প্রতি মাসে গড়ে ৪০ হাজারেরও বেশি চিঠি আদান প্রদান হয়। মানুষকে সুন্দরভাবে চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কারণেই মানুষ আমাদের বেছে নেয়।
রাজশাহী সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে অফিসের চিঠি বুকিং করতে আসা বেসরকারি একটি অফিসের কর্মচারি মো. পারভেজ বলেন, প্রায় প্রতিদিনই চিঠি বুকিং করতে এখানে আসতে হয়।
ডাক বিভাগের কথা বললে তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে চাকরি করি। এর মধ্যে কোন দিন অফিস থেকে ডাকে চিঠি পাঠাতে বলেনি। তাদের সেবার মান ভালো না। তাই এখানে দেয়। এ ছাড়াও রাতেও বুকিং করা যায়। ডাকে তো আর ৪টার পর বুকিং দেওয়া যায় না।
তার পশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন। তিনি বন্ধুকে আম পাঠাতে এসেছেন। তিনি বলেন, আগে যোগাযোগ ছিল না। তখন আমরা বাবা-মা, স্ত্রী, বন্ধু সবাইকে চিঠি দিতাম। এখন তো আর সেই দিন নেই। এখন সবাই চাই দ্রুত উত্তর পেতে।
তিনি বলেন, আগের সেই দিনের মত এখন আর চিঠি নেই। এই চিঠি যে কত আবেগ ছিলো সেটি বলে বুঝাতে পারবো না। এই চিঠির জন্য মানুষ অধির অক্ষোও করতো। সেটা একটু মধুর সময় ছিল।
রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল শেখ সাইফুল আলম বলেন, চিঠির সংখ্যা শুধু রাজশাহীতে বা বাংলাদেশে কমেছে তা না। এটা সারাবিশ্বেই কমেছে। মূলত ডিজিটাল সুবিধার করণেই চিঠি কমছে। মানুষ এখন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমেইলে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করছে। ফলে ব্যক্তিগত চিঠি আর নেই বললেই চলে। অফিসিয়িাল চিঠি এখন আসছে। ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানের চিঠি অনেক বাড়ছে।
তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ২০১২-১৩ সালে ডাক বিভাগের অ্যাক্ট হয়। এর ফলে ডাক বিভাগের সঙ্গে কুরিয়ারের কম্পিটিশন বাড়ছে। আমাদের অনেক সেবা সস্পর্কে মানুষ জানেও না। ডোমেস্টিক মেইলে আমাদের একটি যুগান্তকারী কাজ হয়েছে। এখন চিঠি কতদুরে গেলে সেটি গ্রাহক নিজে ট্রাকিং করে দেখতে পারবে। আমরা আশা করছি এগুলো নিয়ে ভালো করবো। আমাদের ভালো একটি সময় আসছে।