ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.): বিতর্কিত ইসলামি বক্তাদের নজরে রাখবে পুলিশ

ইসলামি ওয়াজ মাহফিল | ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদ-ই- মিলাদুন্নবী (সা.)। দিনটিকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তাদের নজরদারিতে রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে উসকানিমূলক কোনও বক্তব্য না দিতে পারে এবং সেই বক্তব্যের কারণে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীকে (সা.)  কেন্দ্র করে রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গোটা রাজধানীতেই ফোর্স মোতায়েন থাকবে। গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীকে কেন্দ্র করে ট্রাফিকের পক্ষ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সেজন্য ট্রাফিক পুলিশরা সার্বক্ষণিক কাজ করবে।

সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত দায়িত্বপালনকারী অ্যাডিশনাল ডিআইজি নাসিম ওয়াজেদ স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনাতেও বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তাদের উসকানিকমূলক বক্তব্যের বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বার্থন্বেষী মহল কর্তৃক ধর্মীয় উসকানি বা গুজব সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট, মন্তব্য বা ছবি আপলোড করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সুযোগগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) হলো ইসলাম ধর্মালম্বীদের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের একটি উৎসব। সারা বিশ্বের মুসলিমরা এই দিনটিকে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে উৎসবের মতো পালন করলেও ইসলামি পণ্ডিতদের মধ্যে এ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম দুই দেশ সৌদি আরব ও কাতারে এই দিবসে উৎসবের আমেজে পালন করা নিষেধ। সালাফিজমের অনুসারীরা এই দিনকে বিশেষ উৎসবীয় আমেজে পালন না করাকে উৎসাহিত করেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশেও মুসলিম ধর্মালম্বীদের মধ্যে সালাফিজমের উত্থান হয়েছে। একারণে বিশেষ দিনগুলোতে ধর্মীয় ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শীদের মধ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য নিয়ে বিরোধ বা দ্বন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাইরে সরাসরিও এসব নিয়ে বিরোধের বিষয়গুলো কড়া দৃষ্টিতে নজরদারি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে,  ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন বা কোনও গোষ্ঠী যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটাতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া যেসব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হওয়ার পূর্ব নজির রয়েছে সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার ও আশেপাশের এলাকায় হকার, ভিক্ষুকদের ওপর সতর্ক নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিনটিকে কেন্দ্র করে যাত্রা, জারিগান, আতশবাজি ইত্যাদি বন্ধ রাখার পাশাপাশি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বিট পুলিশকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইউনিফর্মড পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করতে হবে। জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কুইক রেসপন্স টিম, সোয়াত, সিআরটি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ক্রাইম সিন ভ্যান সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।