প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ২৭ সেপ্টেম্বর, ঢাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: মামলাজট নিরসনে করণীয় বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘আমার বা আমাদের করণীয় হলো, সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, আইনজীবীদের বুঝতে হবে, আইন একটা পেশা, এটি ব্যবসা নয়। পেশাদারত্ব দিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা যাঁরা বিচারক আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগুলোর নিষ্পত্তি করা। আমরা সে ব্যপারে সচেষ্ট থাকব।’

জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। এর আগে অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তার বক্তব্যে আইনের বই বাংলাতে করা, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতার সমাধান এবং উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহারের প্রসঙ্গ উঠে আসে।

বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি প্রধান বিচারপতির জন্য ওই সংবর্ধনার আয়োজন করে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে এখন আটটি বিভাগের জন্য আটজন মনিটরিং জজ (হাইকোর্টের আটজন বিচারপতি) আছেন। তাঁরা প্রতিটি বিভাগের জজদের তাগাদা দিচ্ছেন মামলাগুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করতে। এর ফল পাওয়া যাচ্ছে।

মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। আগে যেখানে নিষ্পত্তির হার ছিল ৭০ শতাংশ বা ৮০ শতাংশ। এখন কোনো কোনো জেলায় ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত নিষ্পত্তির হার বেড়েছে।

অর্থাৎ ১০০টি মামলা ফাইল হয়েছে এ বছর আর ১২৫টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি এই গতি অব্যাহত রাখতে পারি, তাহলে দেশে চার–পাচ বছরের মধ্যে মামলাজট সম্পূর্ণভাবে দূর করতে না পারলেও সহনশীল পর্যায়ে আনতে পারব।’

অধিকাংশ আইনের বই ইংরেজিতে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ১৯৮৪ সালের পর থেকে যত আইন বাংলাদেশে প্রণীত হয়েছে, তার সবই বাংলায়। এর আগে যে আইনগুলো আছে, সব ইংরেজিতে। ইংরেজিতে আইন বাংলায় তরজমা করা কঠিন কাজ নয়। কিন্তু অত সহজও না। সেটির উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।

অনেক বিচারক এখন বাংলায় রায় দিচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, তাঁরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলায় রায় দিতে। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রির একটি অ্যাপ আছে। ইংরেজিতে রায় হলেও সেটি বাংলায় করা যাচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো, এই অ্যাপের ভাষা,...যান্ত্রিক বাংলা। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে জাতি দায়মুক্ত হয়েছে। অপরাধীদের সব সুযোগ–সুবিধা দিয়ে আমরা আইনি সব নিয়ম–নীতি মেনে নির্মোহভাবে এই বিচার করেছি। সেই বিচারে তাদের সাজা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাজা কার্যকর হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো পেয়েছে বিচার।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধানের মূলনীতিগুলো সমুন্নত রাখতে পারলেই আমরা জাতি হিসেবে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারব।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পাশাপাশি শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।