ওষু‌ধের দোকা‌নে রোগীর স্বজন‌দের ভিড়। শুক্রবার দুপু‌রে দিনাজপুর শহ‌রের চারুবাবুর মোড় এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি দিনাজপুর: দিনাজপু‌রে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল ও স্থানীয় ওষুধের দোকানগুলোতে এসব স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছু ওষুধের দোকানে এসব স্যালাই‌ন পাওয়া গেলেও দুই থেকে তিন গুণ বেশি দা‌মে কিনতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনেরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও এম আব্দুর র‌হিম মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতাল ঘু‌রে রোগীর স্বজন ও কর্তব্যরত নার্সদের সঙ্গে কথা ব‌লে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বল‌ছে, ক‌য়েক‌ দি‌নের ম‌ধ্যে এ সংকট কে‌টে যা‌বে।

চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডেঙ্গু, সিজার, সার্জারি, কিডনি ডায়ালাইসিস, মে‌ডি‌সিনসহ সব ধরনের রোগীর জন্য সাধারণ স্যালাইন ও হার্ডম্যান সলিউশন প্রয়োজন প‌ড়ে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের জলীয় অংশ কমে যায়। এতে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তচাপ কমে যায়। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সাধারণত দশমিক ৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড স্যালাইন রোগীর শরীরে পুশ করতে হয়। চিকিৎসকেরা এটাকে ‘নরমাল স্যালাইন’ বলে থাকেন।

দিনাজপুরের ২৫০ শয্যাবি‌শিষ্ট জেনা‌রেল হাসপাতালের সার্জারি ওয়া‌র্ডে চিকিৎসাধীন পারুল বেগম (৪০)। বুধবার রা‌তে পা‌য়ের অস্ত্রোপচারের জন্য ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছেন। চি‌কিৎসক ব্যবস্থাপত্র দি‌য়ে‌ছেন। কিছু ওষুধ হাসপাতাল থে‌কে পে‌য়ে‌ছেন। এক‌টি নরমাল স্যালাইন বাইরের ওষুধের দোকান থেকে ৩২০ টাকায় কিনেছেন। পারুল বেগম বলেন, তাঁর স্বামী ঢাকায় রিকশা চালান। দীর্ঘদিন ধ‌রে তিনি পা‌য়ে আঘাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন। চি‌কিৎসক জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার কর‌তে হ‌বে। এ জন্য সরকারি হাসপাতালে ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছেন। কিন্তু এখা‌নে এসেও তাঁকে ওষুধ কিন‌তে হ‌চ্ছে।

দিনাজপুর মডার্ন মোড়, চারুবাবুর মোড় ও হাসপাতাল মোড় এলাকায় ক‌য়েক‌টি ফা‌র্মেসি‌তে খোঁজ নি‌য়ে জানা যায়, এক মাস থে‌কে হার্ডম্যান ও নরমাল স্যালাইনের সরবরাহ ক‌মে‌ছে। এ জন্য দাম বেড়েছে। প্রতি‌টি হার্ডম্যান সলিউশন ৯২ থে‌কে ১০০ টাকা এবং নরমাল স্যালাইন বি‌ক্রি হ‌তো ৯০ থে‌কে ১০০ টাকায়। সেই স্যালাইন এখন ২৫০ থে‌কে ৩০০ টাকায় বি‌ক্রি হ‌চ্ছে।

চারুবাবুর মোড় এলাকার একটি ফা‌র্মেসির বিক্রয়কর্মী মো‌মিনুল ইসলাম ব‌লেন, দোকানে হার্ডম্যান স্যালাইন কয়েকটি আছে। তবে নরমাল স্যালাইন দুই সপ্তাহ থে‌কে সরবরাহ নেই।

হাসপাতাল সূ‌ত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনা‌রেল হাসপাতা‌লে রোগী ভ‌র্তি ছিলেন ২৭৬ জন এবং এম আব্দুর র‌হিম মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে ৮৭৫ জন। তাঁদের অধিকাংশই মেডিসিন, সার্জারি ও অর্থোপেডিক ইউনিটে ভ‌র্তি।

এম আব্দুর র‌হিম মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লের সি‌নিয়র স্টাফ নার্স রা‌বেয়া আক্তার ব‌লেন, হাসপাতা‌লে হার্ডম্যান সলিউশন আছে। নরমাল সলিউশনও ছি‌ল, ত‌বে ক‌য়েক‌ দিন হয় শেষ হ‌য়ে‌ছে।

স্যালাইন সংক‌টের বিষ‌য়ে দিনাজপুরের ২৫০ শয্যাবি‌শিষ্ট জেনা‌রেল হাসপাতা‌লের আবা‌সিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার‌ভেজ সো‌হেল রানা ব‌লেন, স্যালাইন দু‌টির সরবরাহ ক‌মে‌ছে। চা‌হিদা অনুযায়ী পাওয়া যা‌চ্ছে না। ত‌বে বগুড়া ইডি‌সিএলে (সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিডেট) চা‌হিদা পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। খুব কম সম‌য়ের ম‌ধ্যে এ সংকট দূর হ‌বে।