নিজস্ব প্রতিবেদক: সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে গণ–অনশন ও গণ–অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা–কর্মীরা। টানা ৩৪ ঘণ্টা এই কর্মসূচি চলার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় থেকে আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন তাঁরা।
শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অনশনস্থলে যান আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার। সেখানে তিনি ঐক্য পরিষদের নেতাদের অনশন ভাঙতে এবং কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেন। এ সময় তিনি বলেন, সবার আগে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা দরকার, এটি নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন সংখ্যালঘু কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী হওয়া উচিত। এ কারণে আমরা সংখ্যালঘু কমিশন সবার আগে করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এটি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।’
সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংখ্যালঘু কমিশন শেষ পর্যায়েই আছে বলা যায়। আর অন্য আইনগুলো (নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে থাকা) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, সংখ্যালঘু কমিশনের মতামত নিয়ে করতে আরও বেশ কিছু সময় লাগতে পারে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সরকার সজাগ আছে। এই আস্থাটুকু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর রাখতে হবে।
এরপর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘কবির বিন আনোয়ারের কাছে আমরা সুস্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতি চাই যে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে আপনি যে কথা দিয়েছেন, এই কথা আপনাদের রাখতে হবে। কারণ, অতীতেও আমাদের অনেকে অনেক কথা দিয়েছে, কিন্তু পরে কেউ কথা মনে রাখে নাই। আমরা ধরে নিচ্ছি, আপনার কথাগুলো বাস্তবায়িত হবে। এটাকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা অনশন কর্মসূচির বাদবাকি অবস্থানটা প্রত্যাহার করতে চাই।’
রানা দাশগুপ্তর এই বক্তব্যের পর তাঁকে পানি পান করান কবির বিন আনোয়ার। অন্য নেতাদের পানি পান করান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক। এ সময় সেখানে পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথসহ পরিষদের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে অনশন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রানা দাশগুপ্তসহ ঐক্য পরিষদের বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে রানা দাশগুপ্তসহ সাতজনকে অনশনস্থলে স্যালাইন দেওয়া হয়। আর দুজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনাধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ, সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ভূমি কমিশন, অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, দলিত ও চা–শ্রমিকদের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে বিশেষ কোটা ও সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা ইত্যাদি।
এসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গত শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে গণ–অনশন ও গণ–অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। তাদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। গত শুক্রবার সারা দিন ও রাতে শহীদ মিনারে অবস্থান করেন ঐক্য পরিষদের নেতা–কর্মীরা। এই কর্মসূচি রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলার কথা ছিল। তবে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে ধারাবাহিকভাবে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় ঐক্য পরিষদ।