ঢাকার মহাখালীর হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে হামলার এই ঘটনা ঘটেছে | ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা–কর্মী পাশের একটি বারে ঢুকে মদ্যপান করেন। শেষ দিকে নিজেদের দুই পক্ষে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় বার কর্তৃপক্ষ মদের দাম চাইলে আরও নেতা–কর্মীকে ডেকে এনে ওই বারে ভাঙচুর, কর্মচারীদের মারধর এবং টাকা ও মদ লুট করেন তাঁরা। পুলিশ ও ছাত্রলীগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে  শনিবার রাতে মহাখালীর হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানে। তিতুমীর কলেজ থেকে গুলশানের দিকে কিছুটা এগোলে এই হোটেলের অবস্থান। হোটেল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীরা তাদের ক্যাশ থেকে নগদ সোয়া চার লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ ও বিয়ার লুট করে নিয়েছেন।

এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে উজ্জল বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে ঘটনার চার দিন পরও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

যোগাযোগ করা হলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁরা তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। মাঝেমধ্যেই তাঁরা ওই বারে ফাউ খেতে যান। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান ওরফে সাগরের (২৭) নেতৃত্বে বারে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লোকমান হোসেন ওরফে রাহুল (৩০) ও সুলতান হামলায় (৩২) অংশ নেন। শাহীন (২৭) নামে আরেকজন ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানা গেছে।

বনানী থানায় করা মামলায় সাগর, রাহুল, শাহীন ও সুলতানকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া হামলা ও ভাঙচুরে অংশ নিয়েছেন, এমন অজ্ঞাতপরিচয় ৩০–৪০ জনের কথা এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে আজ রাতে যোগাযোগ করা হলে সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, ছাত্রলীগের মতো সংগঠনে থেকে তাঁরা মাতাল হয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। তাঁদের উপযুক্ত বিচার হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

ছাত্রলীগ নেতা রিপন মিয়া বলেন, পাশের টেবিলে খেতে বসা আশিকদের সঙ্গে প্রথমে ছাত্রলীগ নেতা সাগর ও রাহুলদের বাগ্‌বিতণ্ডা ও পরে মারামারি হয়। সেটা থেকেই ভাঙচুর হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।

মামলার বরাত দিয়ে বনানী থানার পুলিশ জানায়, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাগর, রাহুল, শাহীন ও সুলতান জাকারিয়া রেস্টুরেন্ট ও বারে ঢোকেন। তাঁরা টেবিলে বসে খাওয়াদাওয়া করেন। এ সময় পাশের টেবিলে বসে আশিক, সুমন, নোমান ও জাবের নামের চার যুবক খাচ্ছিলেন। বার বন্ধ হওয়ার আগমুহূর্তে সাগররা পাশে বসা আশিকদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বারের এজিএম আবু বক্কর সবাইকে বিল দিয়ে বার ছেড়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু তাঁরা বিল পরিশোধ না করে পরস্পরের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হন।

এর একপর্যায়ে সাগর ফোন করলে ৩০–৪০ জন ছাত্রলীগ নেতা–কর্মী লোহার রড, জিআই পাইপ ও চাপাতি নিয়ে রেস্তোরাঁর সামনে আসেন। কাচের ফটক বন্ধ থাকায় তা ভেঙে তারা রেস্তোরাঁর দোতলায় ঢুকে ভাঙচুর চালান। এ সময় তাঁরা এক হোটেল কর্মচারীকে মারধর করে ক্যাশ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা লুটে নেন। পরে হামলাকারীরা দোতলা থেকে নেমে নিচতলার কলাপসিবল গেট ভেঙে বারে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় বারের কর্মচারীরা বাধা দিতে গেলে তাঁরা বারের ৭ কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেন। তাঁরা বারের ক্যাশ ভেঙে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৭৩ বোতল মদ ও ৩৬০ ক্যান বিয়ার (মোট মূল্য ৬ লাখ ৭ হাজার টাকা) নিয়ে চলে যান।