টিসিবির পণ্য বিক্রি আ.লীগ কার্যালয়ে, পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি  সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে গিয়ে দিনভর ভোগান্তির শিকার হন নিম্ন আয়ের মানুষ।

শনিবার সলপ ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। ভর্তুকি মূল্য ক্রেতাদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও ইউনিয়ন পরিষদের পরিবর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টিসিবি পণ্য বিক্রি করায় দিনভর ভোগান্তি শিকার হন কার্ডধারীরা। আবার অনেকে নির্ধারিত পণ্যের চেয়ে কম পণ্য পান বলে অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, কার্ডধারী একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি চাল ৪৭০ টাকায় কিনতে পারবেন। যার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা।

কার্ডধারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিন দেখা যায়, সলপ ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি করা হয় সোনতলা মোড়ে সলপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। কার্যালয়ের সামনেই রাস্তার ওপরে নিম্ন আয়ের কার্ডধারী ক্রেতাদের প্রখর রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে রাখা হয়। কেউ কেউ প্রখর রোদ থেকে বাঁচতে হাতে থাকা ব্যাগ মাথার ওপরে রাখেন।

টিসিবির পণ্য কিনতে আসা সলপ ইউনিয়নের বাহিমান গ্রামের মাহাতাব সরকার (৬৭) অভিযোগ করেন, সকালে ১৫ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সোনতলা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে রোদের মধ্যে দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর ৪৭০ টাকায় ৫ কেজি চাল ও দুই কেজি তেল পেয়েছি। দুই কেজি ডাল দেওয়ার কথা থাকলেও আমাকে দেয়নি। 

পরে ডিলারের কাছে ডাল চাইতে গেলে বলেন সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এগুলা টাকা দিয়ে কিনতে এসে যদি সারা দিন ব্যয় করতে হয়, তাহলে কি আমাদের পেট চলবে।

পণ্য কিনতে আসা একই গ্রামের গোলজার হোসেন (৪২) বলেন, ‘সেই সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ইউনিয়ন পরিষদে দিলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। এখানে রোদের মধ্যেও জায়গা হারানোর ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।’

স্থানীয় একজন স্কুলশিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করায় নারী ও বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। প্রখর রোদেও তাঁদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

ডিলার মেসার্স মার্জিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসুদ রানা মসুর ডাল না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘পণ্য কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একজন মসুর ডাল পাইনি বলে জানিয়েছিল। আমি তাকে অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। আর উপজেলা থেকে আমাদের যেখানে পণ্য বিক্রি করতে বলে, আমরা সেখানেই বিক্রি করি।’

পণ্য বিক্রির তদারকি কর্মকর্তা উপসহকারী কৃষি অফিসার আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘সলপ ইউনিয়নে মোট ১ হাজার ৪৩৬টি কার্ড রয়েছে। এ কারণে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। তবে আগে ইউনিয়ন পরিষদেই পণ্য বিক্রি করা হতো। ইউএনওর নির্দেশে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়।’

সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকাত ওসমান বলেন, ‘আগে থেকে টিসিবির পণ্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে দেওয়া হতো। কিন্তু কিছুদিন হলো ইউনিয়ন পরিষদ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে টিসিবির পণ্য বিক্রি করায় সিংহভাগ কার্ডধারীর গাড়ি ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা ও সময়ের ব্যয় হয়েছে। এতে অনেকেই ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।  বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলা হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগ অফিস থেকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়।’

এ প্রসঙ্গে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, ‘এমন ভোগান্তির বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’