রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পাশে গাছে পেরেক মেরে লাগানো হয়েছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ব্যানার। মঙ্গলবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন সামনে রেখে পদপ্রত্যাশীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকে ক্যাম্পাসের ‘প্যারিস রোড’ এর দুই পাশের গগণ শিরীষগাছে পেরেক মেরে ব্যানার–ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। গত কয়েক বছরে সেখানে বেশকিছু গাছ মরে গেছে। এখন পেরেক ঠোকার কারণে গাছগুলো আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ক্যাম্পাসের কাজলা ফটক থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের গেট পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ‘প্যারিস রোড’ নামে পরিচিত। এ সড়কের সৌন্দর্যের প্রধান আকর্ষণ দুই পাশের সুউচ্চ গগণ শিরীষগাছ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে হারাতে বসেছে এই ঐতিহ্য। গত কয়েক বছরে অল্প ঝড়েই ভেঙে যাওয়াসহ বেশকিছু গাছ মরে গেছে। এসব গাছে আবার পেরেক মেরে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন বলেন, গাছে পেরেক মারলে সেখানে মরিচার সৃষ্টি হয়ে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় এবং অনেক ধরনের রোগ হয়। বাকলের নিচেই সাধারণত গাছের পরিপাকতন্ত্র থাকে। পেরেক মারলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও ঝড়বৃষ্টিতে সহজেই গাছ ভেঙে যায়।

মনজুর হোসেন আরও বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশে সাধারণত গগণ শিরীষগাছ ১৬০ বছর বেঁচে থাকে। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসের গগণ শিরীষগাছগুলো গাছ মরার পেছনে দুটি কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গাছে পেরেক লাগানো, অন্যটি গাছের পাশ দিয়ে নালা নির্মাণ।’

ছয় বেশি সময় পর ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনকে সামনে রেখে পদপ্রত্যাশীরা শুরু করেছেন প্রচারণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা ফটক থেকে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের গেট পর্যন্ত প্যারিস রোডের প্রায় প্রতিটি গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছেন তাঁরা।

প্যারিস রোডের দুই পাশের যেসব নেতার ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক, উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, কর্মী আবদুল্লাহ আল মামুন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল, শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান প্রমুখ। শুধু প্যারিস রোডের গগণ শিরিষগাছ নয়, ক্যাম্পাসের আরও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশের গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।

এ বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যানার সাঁটানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যদি প্রশাসন সাইনবোর্ড সরাতে বলে আমি সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলব।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যানার সরিয়ে ফেলতে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমি দুই দিন সময় চেয়ে নিয়েছি। সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলব।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্যারিস রোডের দুই পাশের গাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ‘আলবিজিয়া লেববেক’। স্থানীয়ভাবে এটি গগণ শিরীষ নামে পরিচিত। অনুকূল পরিবেশে যার আয়ুষ্কাল হয় ১৫০–১৬০ বছর। এটি মূলত ইন্দোমালয়, নিউগিনি ও উত্তর অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের উদ্ভিদ। তবে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে এই উদ্ভিদ চাষ হয় অথবা স্বাভাবিকভাবে জন্মায়। ১৯৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছগুলো লাগানো হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘পেরেক মারলে গাছের অনেক ক্ষতি হয়। ক্যাম্পাসের অনেক জায়গায় গাছে পেরেক মেরে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যাঁরা সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বসে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে ছাত্রনেতাদেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।’