খন্দকার মোশাররফ হোসেন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে ছুটি নিয়েছেন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা হয়। তিনি গত ৯ জুলাই থেকে পরবর্তী ৯০ বৈঠকের (সংসদের) জন্য ছুটি পেয়েছেন।
সুইজারল্যান্ড থেকে ই–মেইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বরাবর ছুটির আবেদনটি পাঠান খন্দকার মোশাররফ। আজ রাতে সংসদ অধিবেশনে স্পিকারের আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক ছুটির আবেদনটি পড়ে শোনান।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আবেদনে বলা হয়, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে পারছেন না। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি এখন সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছেন।
চিঠিতে খন্দকার মোশাররফ উল্লেখ করেন, তিনি ‘ব্যাক পেইন’, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেশারসহ নানা রোগে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দীর্ঘদিন আরও চিকিৎসা প্রয়োজন। এ জন্য ৯ জুলাই থেকে পরবর্তী ৯০ বৈঠকের জন্য ছুটির আবেদন করেছেন তিনি।
চিঠিটি পড়ে শোনানোর পর ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক বলেন, অতীতে প্রথম, নবম, দশম এবং চলতি একাদশ জাতীয় সংসদেও ছুটির জন্য কয়েকজন সংসদ সদস্য আবেদন করেছিলেন। সংসদ সেগুলো মঞ্জুর করেছিল। তিনি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের আবেদন বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেন। পরে কণ্ঠভোটে তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জুর করে সংসদ।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালে তিনি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী হন। এরপর ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর অনুগত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার উন্নয়নকাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও জমি দখল করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন—ফরিদপুরের রাজনীতিতে এমন আলোচনা রয়েছে।
২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এরপর স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। তবে ২০২০ সালের ১৬ মে ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবলচন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার পর খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্থানীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে ফরিদপুরে খন্দকার মোশররফের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। ওই অভিযানে তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও তাঁর ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মূলত বরকত–রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর স্থানীয় রাজনীতি থেকে নির্বাসিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর গত বছরের ৮ মার্চ অর্থ পাচার মামলায় মোশাররফের ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর কিছুদিন পর জাতীয় সংসদের কাজেও পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন একসময়ের আলোচিত মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি সুইজারল্যান্ডে চলে যান।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, খন্দকার মোশাররফ হোসেন সর্বশেষ জাতীয় সংসদের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন গত বছরের ৬ এপ্রিল। সেটি ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশন। এখন সংসদের ২৪তম অধিবেশন চলছে।